সিএএ-র প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশে আন্দোলন। —ফাইল চিত্র
জামিন পেলেন উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ছয় শ্রমিক। গ্রেফতার হওয়ার ২৬ দিন পরে বুধবার তাঁদের জামিন হয়েছে। আইনজীবীরা জানান, জামিনের আর্জির এ দিনই ছিল প্রথম শুনানি। আদালত কী রায় দেবে তা নিয়ে পরিজনদের পাশাপাশি চিন্তায় ছিলেন আইনজীবীরাও।
আইনজীবীদের বক্তব্য, ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৮টি ধারায় মামলা করা হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটি ছিল জামিনঅযোগ্য ধারা। শুনানির প্রথম দিনেই তাঁরা জামিন পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে পরিজনদের।
এ দিন লখনউ জেলা আদালতে শুনানির পরে বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানান ধৃতদের আইনজীবী আসমা ইজহাত। তবে তিনি জানিয়েছেন, এ দিনই তাঁরা জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না। আরও দু-তিন দিন সময় লাগবে।
এ দিন বিকেলে জামিনের খবর গ্রামে পৌঁছতেই খুশি পরিজনেরা। কবে সকলে বাড়ি ফিরবেন তার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা।
আইনজীবী আসমা ইজহাত এ দিন লখনউ থেকে বলেন, ‘‘জেল থেকে ছাড়া পেতে আরও দু’-তিন দিন সময় লাগবে। তবে ছয় শ্রমিক জামিন পেয়েছেন এটাই সব থেকে বড় কথা।’’
গত ১৯ ডিসেম্বর নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তরপ্রেদেশে হিংসায় জড়িত সন্দেহে অনেককেই গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন লখনউয়ে হোটেলে কাজ করতে যাওয়া হরিশ্চন্দ্রপুরের ডাঙ্গিলার খাইরুল হক, সালেদুল হক, সাগর আলি ও সানজুর আলি এবং জনমদোলের শাহাআলম ও আসলাম।
কী ভাবে তাঁরা মুক্তি পাবেন, সেই চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েন পরিজনেরা। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা পৌঁছে দেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা তজমুল হোসেন। শিলিগুড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন। পাশাপাশি ধৃত শ্রমিকেরা যে হোটেলে কাজ করতেন, সেখানকার মালিকেরাও তাঁদের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন। পরিজনেরা জানান, জামিনের আর্জি জানানোর পরে ৮ জানুয়ারি শুনানির দিন ঠিক হয়। কিন্তু লখনউয়ের এক আইনজীবী খুন হওয়ায় সে দিন আদালতে কোনও কাজ হয়নি। পরে ১৫ জানুয়ারি শুনানির দিন স্থির হয়।
ডাঙ্গিলার দুই ভাই খাইরুল ও সালেদুল যে হোটেলে কাজ করতেন তার মালিক উত্তম কাশ্যপ এ দিন লখনউ থেকে ফোনে বলেন, ‘‘ওরা কোনও অন্যায় করেনি। কী হচ্ছে দেখতে বাইরে বের হয়েছিল। ওদের জামিনের জন্য আমরা লেগেছিলাম।’’
ঘরের ছেলেদের জামিনের কথা শুনে হাসি ফুটেছে আত্মীয়দের। খাইরুলের বাবা মহম্মদ হোদা, দিদি সায়গম খাতুন বলেন, ‘‘কবে ওরা বাড়ি ফিরবে সেই অপেক্ষায় দিন গুনছি।’’
সাগর আলির দাদা আব্দুস সালাম, আসলামের বাবা আব্দুল কালাম বলেন, ‘‘২৬ দিন ধরে বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। একটা পাথর যেন বুক থেকে নেমে গেল। ওরা ভাল ভাবে বাড়ি ফিরুক, এটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা।’’