রাজ্যপাল হওয়া নিয়ে কী মত শিশিরের?
কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীকে কি বিজেপি কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল করতে পারে? করলে তিনি কী করবেন? এর জবাবে শিশির স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন— তিনি তৈরি।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরে জল্পনা শোনা গিয়েছিল, শিশির তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁকে ভবিষ্যতে কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল করা হতে পারে। তবে শিশির ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ বিজেপিতে যোগ দেননি। অন্তত তাঁর তেমনই দাবি। পূর্ব মেদিনীপুরের একটি জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় উপস্থিত থাকলেও বিজেপির পতাকা হাতে নেননি শিশির।
ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে এনডিএর উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার পরে বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে শিশিরের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে জল্পনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ধনখড়ের ইস্তফার পর মণিপুরের রাজ্যপালকে বাংলার রাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সোমবার তিনি রাজ্য বিধানসভায় শপথও নিয়েছেন।
বস্তুত, শিশির যে বাংলার রাজ্যপাল হবেন না, তা নিয়ে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের খুব একটা সন্দেহ ছিল না। কারণ, প্রথমত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে রাজ্যের বাসিন্দা, সেই রাজ্যেরই রাজ্যপাল হওয়ার নজির বা ইতিহাস (আইন নয়) ভারতে নেই। দ্বিতীয়ত, রাজ্যপাল করে কাউকে কোনও রাজ্যে পাঠানো হলে এটাও সাধারণত দেখা হয়, যাতে সেই রাজ্যের ভাষাটি তাঁর জন্মসূত্রে শেখা ভাষা না হয়। যদিও এটিও রীতি বা রেওয়াজ। এই মর্মে কোনও আইন নেই।
শিশিরের ক্ষেত্রে বাংলার রাজ্যপাল হওয়ার সম্ভাবনা আরও ছিল না, কারণ, তাঁর পুত্র শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এ ক্ষেত্রেও এমন কোনও আইন নেই। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন কোনও রেওয়াজ তো নেই-ই। উল্টে তেমনকিছু হলে রাজ্যপালের উপর ‘পক্ষপাতিত্ব’-এর দায় এসে পড়বে।
তবে বাংলা না-হলেও অন্য রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্ব পেতে পারেন শিশির। তেমন হলে তিনি সেই দায়িত্ব নিতে তৈরিও আছেন। সোমবার তাঁকে এই মর্মে প্রশ্ন করা হলে শিশির স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি একজন কর্মঠ লোক। যদি আমাকে দেন, তা হলে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। যাঁরা করবেন, তাঁরা যদি দয়া করে দেন, তা হলে নিশ্চয়ই পালন করব। তবে আমি কিছু জানি না।’’ পঞ্চায়েত থেকে জাতীয় রাজনীতি— সর্বত্র যে তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন শিশির। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, শিশিরকে অন্য কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল করা হলেও তা এখনই নয়। কারণ, শিশির এখন কাঁথির সাংসদ। যেখানে ভোট ২০২৪ সালে। তিনি রাজ্যপাল হলে তাঁকে অবিলম্বে সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কাঁথি আসনে উপনির্বাচন হবে। আপাতত বাংলায় যা হাওয়া, তাতে অধিকারী পরিবারের পক্ষে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। সেই ‘ঝুঁকি’ কেন বিজেপি নিতে যাবে!
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল পদের জন্য সাধারণত প্রবীণ রাজনীতিকদেরই বাছা হয়। কংগ্রেস থেকে বিজেপি জমানায় সেটাই দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, এ-ও দেখা গিয়েছে যে, নিজের রাজ্যে কাউকে রাজ্যপাল করে পাঠানো হয় না। বাংলায় বাংলাভাষী রাজ্যপাল হওয়ার নজিরও নেই। বাংলায় কিছু দিন পরে স্থায়ী রাজ্যপালের নাম ঘোষণা হতে পারে।