রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিলেন কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী।
তৃণমূলের নির্দেশ মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর কলকাতায় ভোট দেওয়ার কথা। কিন্তু দিল্লিতে গিয়ে সংসদ ভবনে ভোট দিলেন কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। একই কাজ করেছেন তাঁর পুত্র তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। দু’জনে কাকে ভোট দিয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে জল্পনা। কিন্তু সে সবকে পাত্তা না দিয়েই দু’জনেরই দাবি, দলের নির্দেশমতো প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।
তবে পাশাপাশিই দলকে খানকিটা ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলে প্রবীণ রাজনীতিক শিশির সোমবার দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে যশবন্ত সিন্হার তুলনায় অনেক এগিয়ে দ্রৌপদী মুর্মু। শিশির স্পষ্টই বলেন, ‘‘দ্রৌপদী মুর্মু সেরা প্রার্থী।’’
শুধু এটুকুই নয়, উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে বাংলার পাওয়া ‘সেরা রাজ্যপাল’ বলেও উল্লেখ করেছেন শিশির। তৃণমূলের সঙ্গে ধনখড়ের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। বস্তুত, রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কও কখনও ‘মসৃণ’ ছিল না। তাঁকে বিজেপি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পরে সমর্থন বা বিরোধিতা নিয়ে কোনও কথাই এখনও পর্যন্ত বলেনি তৃণমূল। সেই সময়ে তৃণমূলেরই সাংসদ শিশিরের মুখে শোনা গেল ধনখড়ের প্রশংসা। শিশির বলেছেন, ‘‘উপরাষ্ট্রপতি হিসাবেও যোগ্য প্রার্থী জগদীপ ধনখড়।’’ তবে কি তিনি ধনখড়কেই ভোট দেবেন? সতর্ক শিশিরের জবাব, ‘‘আমি দলের লোক। দল যা বলবে সেটাই করব। দ্রৌপদী সেরা জেনেও ভোট দিতে পারিনি।’’
খাতায়কলমে শিশির-দিব্যেন্দু তৃণমূলের সাংসদ হলেও দলের সঙ্গে তাঁদের এখন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিশিরকে বিজেপির মঞ্চেও দেখা গিয়েছিল। তবে তিনি সে কথা মানতে নারাজ। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন কোনও দলের পতাকা হাতে নিইনি। আমি অনেক কিছু নিয়ে তৃণমূলে এসেছিলাম। তার ফল দল পেয়েছে। যাঁরা সত্যিকারের দলের লোক, তাঁরা সত্যি কথা বলবেন। আমি দায়িত্ব, কর্তব্য জানি। কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কাকে ভোট দিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে শিশির বলেন, ‘‘কথাবার্তা, দায়িত্ব, দলীয় শৃঙ্খলা— এ সব তো আমাকে এই বয়সে শেখাতে হবে না! এ তো গোপন ব্যালটে ভোট। আমি এক রকম বলে আর এক রকম দিলে কেউ কিছু বুঝবে না। তবে তাতে কিছু লোকের কথা বলার সুযোগ হয়। আমাদের পরিবার নিয়ে অনেক গালগল্প হচ্ছে। আরও একটা গল্প যোগ হল। তাতে আমার কোনও কষ্ট নেই, দুঃখ নেই। যা করি জ্ঞানত করি, সজ্ঞানে যা বুঝি তাই করি।’’
সোমবার ভোটদানের পরে শিশির স্পষ্ট ভাবেই বুঝিয়ে দেন যে, দলের নির্দেশ মেনেই তিনি যশবন্তকে ভোট দিয়েছেন। তবে তার পরেও সমালোচনা করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দলবিরোধী আইন সম্পর্কে উনি ভালই জানেন। তাই এ সব বলছেন। দু’নৌকায় পা রেখে রাজনীতি করছেন। কেন বলতে পারছেন না যে, তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন?’’ দিল্লিতে গিয়ে কেন সপুত্র শিশির ভোট দিচ্ছেন, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। যার জবাবে শিশির জানান, কলকাতায় ভোট দিতে হলে আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হত। কিন্তু তাঁর তা মনে ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ভুলেই গিয়েছি যে, আমায় দরখাস্ত করে কলকাতায় নিতে হত। দিল্লি আসার জন্য আমার অনেক টাকা খরচও হয়ে গেল। কলকাতায় দিতে পারলে ভালই হত।’’ দিল্লি আসার পিছনে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি বা চক্রান্তের কিছু নেই বলেও দাবি করেন প্রবীণ সাংসদ।
তিনি তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন, আছেন, থাকবেন বলে দাবি করলেও দলের সমালোচনাও করেছেন শিশির। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে বহু দিন আগে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার গুষ্টিতুষ্টি তুলে গালাগাল করে। আর মিথ্যা মামলা আমার ছেলে, বৌমা সকলের নামে করে। কপালে যা আছে হবে। আমি এ সব নিয়ে ভাবি না।’’ শিশিরের সংযোজন, ‘‘দল আমায় কলকাতায় ভোট দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছে দল। আমি তার উত্তরও দিয়ে দিয়েছি। আমি কোনও দিন কোনও অন্য দলের পতাকা ধরিনি।’’ তবে এ সব কথার মাঝেই জানিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর পছন্দের কথা। বলেছেন, ‘‘নেত্রীর (মমতা) পছন্দই আমার পছন্দ।’’