প্রস্তুতি: ব্রিগেড চত্বরে ব্যানারে বঙ্গবন্ধু। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক নতুন নিশান প্রথম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল সেই মাঠেই। আগামী শনিবার, সেই দিনটির অর্ধ শতক পূর্তি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ব্রিগেড-সমাবেশ উপলক্ষে ফের ব্রিগেডমুখী হবে কলকাতা।
৫০ বছর আগের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী এবং বঙ্গবন্ধুকে দেখতে সে-দিন ব্রিগেডের মাঠে উপচে পড়েছিল কলকাতা। নতুন দেশ বাংলাদেশের তরফে এই বাংলার ভাই ও বোনেদের জন্য শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতার বাণী বহন করে এনেছিলেন মুজিব। নিছকই নাছোড় বাঙালির লড়াই নয়। মুজিব-কণ্ঠে সে-দিন শোনা গিয়েছিল, এক ঘা-খাওয়া জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে জাতি মুক্তিপাগল, সে জাতি স্বাধীনতাকে ভালবাসে, সে জাতিকে বন্দুক কামান দিয়ে দাবাইয়া রাখা যায় না!’’ আর ২০২১-এর কলকাতায়, ব্রিগেডের মাঠেই শতকণ্ঠে শোনা যাবে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার আবৃত্তি! ‘আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে / আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে’!
ঘটনাচক্রে, এ হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও ৫০তম বছর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ব্রিগেডের মাঠে ইন্দিরা গাঁধীর উপস্থিতিতে গণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। প্রকাশ্য সমাবেশে সেই প্রথম স্বীকৃতি নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবও বিদেশের মাটিতে প্রথম কলকাতার ব্রিগেডের মাঠ থেকেই শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান।
ব্রিগেডের অনুষ্ঠানে কলকাতায় আসছেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দেশের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান অনিল চৌহান প্রমুখ থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয় গুণিজনেরাও সংবর্ধিত হবেন। শোনা যাবে দুই বাংলার শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি নন্দনে আমন্ত্রণ-ভিত্তিক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। একাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী।
বিদেশি সংবাদ সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের খবর করে তা ছড়িয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় আজকের বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন কলকাতার দুই তরুণ সাংবাদিক। তাঁরা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুরজিৎ ঘোষাল। কুমিল্লায় খান সেনাদের জিম্মায় তাঁরা নিহত হন বলেই পরে বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায়। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে দীপক ও সুরজিতের নামে স্মৃতিফলক উন্মোচন করবেন বাংলাদেশের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।