দল হারলেও নজর কাড়লেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশি রিচার্ড সেলিস (ডান দিকে) ছবি: সমাজমাধ্যম।
গোয়া ১ (ব্রাইসন)
ইস্টবেঙ্গল ০
আইএসএলে এখনও পর্যন্ত জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। তবে হারের হ্যাটট্রিক করে ফেলল বেশ কয়েক বার। রবিবার এফসি গোয়ার কাছে ০-১ গোলে হেরে গেল তারা। নতুন বছরে প্রথম তিনটি ম্যাচেই হারতে হল। অস্কার ব্রুজ়োর জমানায় প্রথম হারের হ্যাটট্রিক। মুম্বই সিটি, মোহনবাগানের পর এ বার গোয়া। আইএসএলের প্লে-অফে ইস্টবেঙ্গলের ওঠার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
১৬ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ১১ নম্বরেই থাকল। ছয়ে থাকা মুম্বই সিটির থেকে এখনই ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে। হাতে আর আটটি ম্যাচ। অবস্থা যা, তাতে আটটি ম্যাচের মধ্যে অন্তত পাঁচটি ম্যাচে না জিতলে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ছয়ে শেষ করা মুশকিল। অন্তত ৩০ পয়েন্ট নিশ্চিত করতেই হবে। ইস্টবেঙ্গল শুধু নিজেরাই হারেনি, চাপ বাড়াল মোহনবাগানেরও। জিতে গোয়া উঠে এল দ্বিতীয় স্থানে। মোহনবাগানের সঙ্গে তাদের ছ’পয়েন্টের পার্থক্য।
সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী
গোল করতে না পারলেও প্রায় প্রতি ম্যাচেই অনেকগুলি সুযোগ তৈরি করছে ইস্টবেঙ্গল। সমস্যা হল, সেগুলি কাজে লাগাতে পারছে না তারা। হাতে বিকল্প কম থাকলে অর্ধেক সুযোগও কাজে লাগিয়ে গোল করতে হয়। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা সেই সারসত্যটাই ভুলে গিয়েছেন। গোয়ার মতো উপরের দিকে থাকা দলের বিরুদ্ধে তো এ সব ভুল আরওই করা যায় না। অথচ ঠিক সেটাই বার বার দেখা গেল। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে গোল শোধ করার একটি ভাল সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। পিভি বিষ্ণু বল দিয়েছিলেন নন্দকুমারকে। বক্সে তাঁর পাস দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসের পায়ে পৌঁছেছিল। তিনি ঘুরে বল জালে ঠেলতেই পারলেন না। উল্টে তাঁর পায়ে লেগে বল গোলকিক হয়ে গেল। প্রথমার্ধ শেষের দিকে নন্দকুমার ভাল জায়গায় বল পেলেও বড্ড বেশি বল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হারালেন। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ বেলায় দিয়ামানতাকোস যে সুযোগটি নষ্ট করলেন, তা চোখে দেখা যায় না। সেলিসও এমন কিছু সুযোগ পেয়েছিলেন যা থেকে গোল করা উচিত ছিল।
সেই হিজাজির ভুল
ইস্টবেঙ্গলের গত দু’টি হারে ‘ভূমিকা’ নিয়েছিলেন হিজাজি মাহের। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হল না। ভুল করা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন জর্ডানের এই ডিফেন্ডার। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলকে। এ দিন কর্নার থেকে বল পেয়ে যে বলটা বোরহা হেরেরা ভাসিয়েছিলেন, তা আর একটু পিছনে থাকলে অনায়াসে ক্লিয়ার করে দিতে পারতেন হিজাজি। তিনি দেখেনইনি পিছনে গোয়ার কোনও ফুটবলার রয়েছেন। দুই লাল-হলুদ ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে ফাঁকায় হেড করে গোল করেন ব্রাইসন। ডিফেন্ডার হয়েও পজিশনিং নিয়ে বড় সমস্যা রয়েছে হিজাজির।
নজর কাড়লেন সেলিস
ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশি নামবেন কি না তা নিয়ে ম্যাচের আগে থেকে জল্পনা ছিল। সেই রিচার্ড সেলিসকে শুরু থেকেই নামিয়ে দিলেন অস্কার ব্রুজ়ো। গত মরসুমের মাঝপথে যে সব বিদেশিদের নেওয়া হয়েছিল তাঁদের মান কী রকম ছিল তা সকলেরই জানা। তাই একটু আশঙ্কা ছিল সেলিসকে নিয়েও। তবে প্রথম ম্যাচ দেখে সেলিসকে ততটাও খারাপ লাগেনি। অভিষেক ম্যাচেই গোল করতে পারতেন। অন্তত দু’টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন বিপক্ষের গোলকিপার। উইং থেকে সেলিসের গতি, ক্রস নজর কেড়েছে। কর্নার তেমন আহামরি করেন না। তবে প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে ফেরার চেষ্টা
অস্কার কোচ হয়ে আসার পর থেকে প্রথমার্ধে গোল খেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ভাল খেলার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে সে ভাবেই জিতেছে তারা। মুম্বইয়ের কাছে অল্পের জন্য হারতে হয়েছে। গোয়ার বিরুদ্ধে শেষের ৪৫ মিনিট ইস্টবেঙ্গলকে সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা গেল। অনেকগুলি সুযোগ তৈরি করল তারা। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় ভুগতে হল। রোজ রোজ একই জিনিস হবে এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। তা হয়ওনি।
সাদিকুর মিস্ এবং লাল কার্ড
মোহনবাগানের প্রাক্তনী আর্মান্দো সাদিকু ইস্টবেঙ্গলকে দেখলেই জ্বলে ওঠেন। এ দিনও গোল করে ফেলতেই পারতেন। বাঁ দিক থেকে ব্রাইসনের পাস পেয়ে চলতি বলেই শট নিতে গিয়েছিলেন। সামনে একা গোলকিপার থাকলেও অবিশ্বাস্য ভাবে সাদিকুর বুটের ডগায় লেগে বল গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর পরেও একটি সুযোগ নষ্ট করেন। শেষ বেলায় হিজাজির ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে লাল কার্ডও দেখলেন।