ফাইল চিত্র।
রবিবার সাতসকালে এক গোছা পেঁয়াজ নিয়ে মুর্শিদাবাদের নওদার আমতলা বাজারে হাজির বছর পঁয়ষট্টির আজিজ শেখ। এক পাতিলেবু বিক্রেতার কাছে তিনি উপুড় করে দিলেন আড়াই কেজি পেঁয়াজ। দোকানদার সামনের ডালা থেকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন দু’টি পাতিলেবু।
নওদার রায়পুরের বাসিন্দা আজিজ পেশায় পেঁয়াজ চাষি। জানালেন, গত কয়েক দিন পেঁয়াজের দাম তলানিতে এসে ঠেকায় খেতের পেঁয়াজ বিক্রি করে উঠতে পারেননি তিনি। তাই ‘অভাবি’ বিক্রি। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। চাষিরা পাচ্ছেন পাঁচ থেকে সাত টাকা প্রতি কেজি। অবস্থা এমনই যে, খেত থেকে পেঁয়াজ ঘরে তোলার খরচটুকু করতে নারাজ চাষি। মাঠ থেকেই সামান্য দামে ফড়েকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন তাঁরা। আজিজের মতো ক্ষুদ্র চাষিদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ইদের মরসুমে হাতে টাকা না থাকায় পাতিলেবু বা অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তাঁরা সংগ্রহ করছেন অবিক্রিত পেঁয়াজের বিনিময়ে।
পেঁয়াজ ও পান চাষে নওদার খ্যাতি রয়েছে। সেখানে পেঁয়াজ, বরজের পানের বিনিময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা চলে। কিন্তু চাষিদের দাবি, এ বারের মতো পেঁয়াজের অভাবী বিক্রি তাঁদের আগে করতে হয়নি। আজিজের আক্ষেপ, ‘‘রোজার মাসে ইফতারের শরবত বানাতে লেবু দরকার। কিন্তু সেই পাতিলেবু কেনার টাকাও হাতে নেই আমাদের।’’ পেঁয়াজের দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ার পিছনে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাকেই দায়ী করছেন চাষিরা। পেঁয়াজ চাষি সবুব হালসানার কথায়, ‘‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চাষি খেত থেকেই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়!’’
ঠিক উল্টো ছবি পাতিলেবুর বিক্রিতে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বলে করোনা আবহে চাহিদা রয়েছে পাতিলেবুর। চাষিদের বক্তব্য, এ বছর চাহিদার তুলনায় পাতিলেবুর জোগান কম। স্থানীয় বাজারে পাতিলেবু উঠতে আরও মাস দেড়েক সময় লাগবে। জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে সাধারণ মাপের কাগজি লেবু এখন বিকোচ্ছে ৫-৬ টাকায়। একটু বড় লেবুর দাম প্রতিটি ১০ টাকা। বছরের অন্য সময় যে পাতিলেবু এক থেকে দু’ টাকায় পাওয়া যায়, এখন তার প্রতিটির দাম আট থেকে ১০ টাকা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সাধারণ মাপের লেবুতে রস না থাকায় ১০ টাকা দিয়ে কাগজি লেবুর দিকেই ঝুঁকছেন অধিকাংশ ক্রেতা। বিক্রেতারাও যেমন খুশি দর হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ। দেদার মুনাফা লুটছে ফড়েরাও। নওদা ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা নমিতা পোদ্দার বলেন, ‘‘কোন আনাজের দাম কখন বাড়বে, কখন কমবে, তা বোঝা মুশকিল। পেঁয়াজের দাম সাত-আট টাকা কেজি, আর পাতিলেবু একেকটি আট-দশ টাকা, এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।’’
পেঁয়াজের পড়ে যাওয়া দরে যখন চোখে জল চাষির, তখন হাসি আরও চওড়া হয়েছে পাতিলেবু ব্যবসায়ীদের।