শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আবার গুরুতর অভিযোগ সুদীপ্ত সেনের
সুদীপ্ত সেনকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আদালত চত্বরে সারদাকর্তা সুদীপ্তের একটি মন্তব্যের ভিডিয়ো তুলে ধরে সারদা-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিরোধী দলনেতাকে গ্রেফতার দাবিতে রাজ্য জুড়ে সরব হয়েছে শাসকদল তৃণমূল। সেই দাবির পর বৃহস্পতিবার তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে সারদাকর্তার আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। সেই ভিডিয়োয় সুদীপ্তের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে টুইটে তৃণমূলের অভিযোগ, ‘শুধু শুভেন্দুই নন, তাঁর ভাইয়েরাও টাকা নিয়েছেন।’
যে অভিযোগ শুনে পাল্টা শাসকদলকে বিঁধেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেছেন, ‘‘এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে হবে। কারণ, তিনিই এ সব বলাচ্ছেন!’’
প্রসঙ্গত, ওই ভিডিয়োয় কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধেও তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছে সুদীপ্তকে। যদিও এ নিয়ে তৃণমূলের তরফে কিছু বলা হয়নি টুইটে। মুকুল বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’ আর অধীরের বক্তব্য, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
গত শুক্রবার প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়োয় (সেটির সত্যতাও আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছিল সুদীপ্তকে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে এ ব্যাপারে কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি লেখার কথাও জানিয়েছিলেন সারদাকর্তা। সেই ভিডিয়ো তুলে ধরে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, সল্টলেকে সাংসদ ও বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট আদালত থেকে বেরোনোর সময় সুদীপ্ত নিজের মুখে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার পরেও কেন তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না সিবিআই?
প্রসঙ্গত, সারদাকর্তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি শুভেন্দু অধিকারীকে টাকা দিয়েছি।’’ কিন্তু কত টাকা দিয়েছেন, তা তাঁর মনে নেই বলে জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অত মনে নেই। পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন প্ল্যান (পরিকল্পনা) পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলাম। চিঠিতে সেই সব তথ্য দিয়েছি।’’
এর পরেই সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী কি ব্ল্যাকমেল করতেন?’’ উত্তরে সারদাকর্তা বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ, ব্ল্যাকমেলও করেছে।’’ ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই শুভেন্দু এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজ্য জুড়ে মিছিল-জমায়েতের কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। তাদের বক্তব্য ছিল, বিজেপিতে কেউ গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে আর সিবিআই বা ইডি তদন্ত করছে না। কারণ, বিজেপি হল ‘ওয়াশিং মেশিন’! গত সোমবার সিজিও কমপ্লেক্সের (যেখানে সিবিআই এবং ইডির দফতর রয়েছে) অদূরে মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে শাসকদল। মিছিল-জমায়েত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে শুভেন্দুর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’-এর কাছে এবং হলদিয়ায়।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রকাশিত ভিডিয়োতে সারদাকর্তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘শুধু শুভেন্দু নন, মুকুল রায় আর অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ করে চিঠি দিয়েছিলাম।’’ এর পর শুধু শুভেন্দু প্রসঙ্গে সুদীপ্তকে বলতে শোনা যায়, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী আমাদের অনেক রকম ভাবে ম্যানিপুলেট করেছিলেন। কাঁথি পুরসভা এলাকায় শ্রমিক হাটের জন্য শুভেন্দুকে ৯০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ৫০ লক্ষ টাকাও এক বার দিয়েছিলাম। ওঁর ভাইরাও সব জানেন।’’ ভিডিয়োয় শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর নাম নিতেও শোনা গিয়েছে সুদীপ্তকে।
ভিডিয়োয় সুদীপ্তের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের টুইটে লেখা হয়, ‘সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন আবার জানালেন, শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ভাইয়েরা তাঁর (সুদীপ্তের) থেকে টাকা নিয়েছেন। দুর্নীতিতে জর্জরিত ওরা।’ আরও সংযোজন, ‘...কিন্তু মোদী-নিয়ন্ত্রিত সিবিআই শুধু কয়েক জনকেই নিশানা করেছে।’
শাসকদলের ওই অভিযোগ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে হবে। কারণ, তিনিই এ সব বলাচ্ছেন!’’