শাহজাহানের প্রভাবশালী হয়ে ওঠার পিছনে বড় ভুমিকা ছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের, অভিযোগ বিরোধীদের। ফাইল চিত্র।
তাঁর বাড়িতে শুক্রবার সকালে অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে ইডি। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। তার পর থেকেই তৃণমূলের ওই নেতার রাজনৈতিক উত্থান আলোচনার কেন্দ্রে। প্রকাশ্যে কিছু না-বললেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার এক প্রবীণ নেতা বলছেন, ‘‘বালুদার (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) জন্যই ওঁর এত বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। বসিরহাট কেন, জেলার অনেক বড় বড় নেতা যখন মন্ত্রী বালুদার ঘরে ঢোকার সাহস করতেন না, তখন, শাহজাহানের জন্য বালুদার ঘরের দরজা ছিল সব সময় খোলা। কোনও বাধা ছাড়াই ও ঢুকে যেত বালুদার ঘরে। দাদা হাসি মুখে মেনেও নিত এ সব।’’
প্রথম জীবনে ট্রেকারের হেল্পার থেকে ভেড়ির মালিকানা পাওয়া শাহজাহান একটা সময়ে সিপিএমের ‘অ্যাকশন স্কোয়াড’-এর সক্রিয় সদস্য ছিল বলেই অভিযোগ বসিরহাটের পুরনো তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই তাঁর অনুগামীদের হাতে ইডি আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আশ্চর্য নন কেউই। তাঁর ‘ঔদ্ধত্যে’র পিছনেও বালুর রাজনৈতিক প্রশ্রয়কেই দায়ী করছে দলের একাংশ। একটা সময়ে হাসনাবাদের সিপিএম বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেবের ‘সুনজরে’ থাকা শাহজাহানকে তৃণমূলে নিয়ে আসেন জ্যোতিপ্রিয়ই। শাহজাহানের রকেটগতিতে উত্থানের পিছনেও তাঁর প্রশ্রয়কেই দায়ী করছেন দলের একাংশ।
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সংগঠন দেখতেন বালু। ২০১১ সালে যখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে মমতা ক্ষমতায় আসেন, তখনও জ্যোতিপ্রিয়ই ছিলেন জেলা সভাপতি। পরে তাঁকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় খাদ্য দফতরের দায়িত্ব দেন মমতা। জোড়া দায়িত্ব নিয়েই দলে দলে সিপিএম নেতা-কর্মীদের জেলায় তৃণমূলে যোগদান শুরু করান বালু। সেই পর্বেই ২০১৩ সালে বালুর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন শাহজাহান। এর পর রূপকথার মতো বসিরহাট মহকুমায় বাড়তে থাকে তাঁর প্রভাব। ফলস্বরূপ মন্ত্রী বালুর দরজা সব সময়ের জন্য খুলে যায় তাঁর কাছে। ১০ বছর খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ওই সময় কলকাতায় খাদ্য দফতরে মন্ত্রীর ঘরে ছিল তাঁর অনায়াস যাতায়াত। এমনকি, দফতরের আধিকারিক ও অন্যান্যদের বাদ দিয়ে তাঁকেই সময় দিতেন মন্ত্রী।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলের বালুর ডানা ছাঁটা শুরু হয়। খাদ্য দফতরের বদলে পান বন। সাংগঠনিক ভাবেও তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়েও সল্টলেকের অরণ্য ভবনে বালুর ঘরের দ্বারও ছিল শাহজাহানের জন্য অবারিত। এমনকি, বিধানসভা অধিবেশন চললে প্রায়ই জ্যোতিপ্রিয়ের ঘরে দেখা মিলত তাঁর। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও বালুর তদারকিতেই সন্দেশখালি থেকে জেলা পরিষদের টিকিট পান শাহজাহান। জয়ী হয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষও করা হয় তাঁকে। সে ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা ছিল বালুর। গত অক্টোবরে বালু ইডির হাতে গ্রেফতার হলেও, সন্দেশখালিতে শাহজাহানের প্রভাব কমেনি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সন্দেশখালিতে সেই প্রভাবেরই প্রতিফলন দেখা দিয়েছে শুক্রবার।