ফাইল চিত্র।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সম্প্রতি রাজ্যে এসে বলে গিয়েছেন, রাজ্য ভাগ নিয়ে আপাতত চুপ করে থাকতে। কিন্তু এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলে কোচবিহার জেলায় প্রচারে নামলেন সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যেরা।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কোচবিহারের জেলা সম্পর্ক প্রমুখ রঞ্জন সরকার ফেবসুকে লেখেন: ‘অনেক অনেক বঞ্চনার অবসান হোক উত্তরবঙ্গবাসীর, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিয়ে শুরু হোক নতুন যাত্রাপথ’। তিনি অবশ্য দাবি করেন, সঙ্ঘের তরফে ওই নিয়ে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উত্তরবঙ্গে যে স্বয়ংসেবকরা রয়েছি, প্রত্যেকেই অনুভব করছি বঞ্চনার কথা। যেখানেই যাচ্ছি, মানুষ আলাদা রাজ্যের দাবি করছেন। সব দিক ভেবেই মনে করছি, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রয়োজন।’’ তিনি প্রচারের কথা মানতে না চাইলেও সঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, সঙ্ঘ প্রচারকেরা গ্রামে গ্রামে এই নিয়ে বলতে শুরু করেছেন— ‘ভাই ভাইও তো আলাদা হয়। উন্নয়নের জন্য আলাদা হলে তো খারাপ কিছু নয়।’
রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই বিজেপি নেতারা উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার দাবি তুলতে শুরু করেছেন। কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে, কখনও পরোক্ষে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভামঞ্চ থেকে (শাহ অবশ্য তখন মঞ্চে ছিলেন না) বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ জোর গলায় সেই দাবি তোলেন। তার পরে বিজেপি নেতৃত্ব দলের উত্তরবঙ্গের বিধায়ক ও সাংসদদের কাছ থেকে এই নিয়ে মত চান। তাঁরা একই সঙ্গে কেএলও প্রধান তথা জঙ্গি নেতা জীবন সিংহ, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অনন্ত মহারাজ এবং মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের কাছ থেকেও মত চান।
বিজেপি নেতাদের একাংশ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পক্ষেই জোর দিচ্ছে। মহারাজ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছি। বিজেপির কোনও চিঠি হাতে পাইনি। পেলে আবারও স্পষ্ট মত জানাব।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, তাঁকেও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির করার পক্ষেই যুক্তি দেখানো হয়েছে। কোচবিহার রাজ্যের সীমানা অটুট থাকলে তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই বলেই পাল্টা জানিয়েছেন মহারাজ।
অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে আগামী দু’বছর বাংলা ভাগের এই প্রচারটাকে জিইয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে গুরুং, অনন্ত মহারাজ ও জীবন সিংহের আলাদা রাজ্যের দাবি এক নয়, সেখানে এঁদের মত চাওয়া হল কেন? বিশেষ করে জীবনের মতো এক জন জঙ্গি নেতার? বিধায়ক সংখ্যায়ও এখন বিজেপি উত্তরবঙ্গে অর্ধেক। তাই তাঁদের দাবি কী করে গোটা উত্তরবঙ্গের দাবি হতে পারে, এই প্রশ্নও উঠেছে।
এ সবের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘আমরা আলাদা রাজ্যের কথা বলিনি। বঞ্চনা থেকে মানুষ এই দাবি করছে। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ভোট রাজনীতির জন্য রাজ্য ভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি। আমরা তা কখনও হতে দেব না। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই জবাব দেওয়া হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।