Roddur Roy

Roddur Roy: আগমন, অবতরণ, এজলাস, নিষ্ক্রমণ এবং বচন— ১৬৩ মিনিটের রোদ্দূর

বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয় রোদ্দূর রায়কে। প্রায় ১৬৩মিনিট তিনি আদালতে ছিলেন। কী হল এই পৌনে তিন ঘণ্টায়?

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২২ ২০:৩৫
Share:

আদালত চত্বরে রোদ্দূর রায়। ছবি: অভিষেক মিত্র।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সামনে ব্যারিকেড আগেই করে রেখেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই ছোটখাটো একটা উৎসাহী ভিড় সেই পুলিশি ঘেরাটোপের বাইরে অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে। সংবাদমাধ্যমের লোকজনও। ব্যারিকেডের ও পাশে কলকাতা পুলিশের ভিড়। তিন পক্ষের এই জটলা অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষায়। রোদ্দূর রায়কে আদালতে হাজির করাবে কলকাতা পুলিশ। যত সময় গড়িয়েছে, জটলার পরিধি একটু একটু করে বেড়েছে।

Advertisement

রোদ্দূরের আগমন

দুপুর ২টো ১১। সাদা টাটা সুমো এগিয়ে আসতে দেখেই জটলার গুঞ্জন বেড়ে গেল কয়েক গুণ। ব্যারিকেডের ভিতরে থাকা পুলিশকর্মীদের তৎপরতাও বাড়ল। সুমো গিয়ে দাঁড়াল কোর্ট লকআপের প্রায় গা ঘেঁষে। সব ক’টা জানলার কাচ নামানো। চালকের আসন, মাঝের আসন— সর্বত্র সাদা পোশাকের পুলিশ। রোদ্দূর কোথায়? তিনি পিছনের আড়াআড়ি আসনে বসে। পাশে পুলিশ। সামনেও পুলিশ। পিছনের সেই দরজা আচমকাই খুলে গেল। নেমে এলেন দুই পুলিশকর্মী। সঙ্গে রোদ্দূর।

Advertisement

রোদ্দূরের অবতরণ

পরনে কালো রঙের জিন্স। হালকা বাদামি রঙের শার্ট। ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে হলুদ স্যান্ডো গেঞ্জি। মাথায় ব্যান্ডানাটা ছিল। তবে চোখে সানগ্লাস বা চশমা ছিল না। পিঠে হালকা ঠেলা দিয়ে পুলিশকর্মীরা তাঁকে ঢুকিয়ে দিলেন কোর্ট লকআপে। ব্যারিকেডের এ পাশে থাকা ভিড়টা সামান্য কথা বলল বটে। তবে অনেকটা স্বগতোক্তির মতো। রোদ্দূরও তাকালেন না কোনও দিকে। বাধ্য ছাত্রের মতো নির্দেশ মেনে নিজেকে সেঁধিয়ে দিলেন কোর্ট লকআপে। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা তাক করে থাকল বটে তাঁকে, কিন্তু কোনও মন্তব্য করলেন না রোদ্দূর।

রোদ্দূর এজলাসে

ব্যাঙ্কশাল আদালতের এজলাস ভিড়ে ঠাসা। ভিতরে বিচারকের সামনে অভিযুক্তদের হাজির করানোর আলাদা সিঁড়িপথ রয়েছে। সেই পথেই এগিয়ে গেলেন রোদ্দূর। নেমে এসে বসলেন বিচারকের ডান দিকে নির্দিষ্ট আসনে। চোখেমুখে কোনও উত্তেজনা নেই। কোনও কথাও বলেননি তিনি। দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল-জবাব চলছে। রোদ্দূর নির্বিকার। মাঝে মাঝে এজলাসে ভিড়ের হট্টগোল শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ হাততালি দিচ্ছেন। রোদ্দূরের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল, কিছুই হয়নি। কিন্তু ভিড়ের কৌতূহল ছিল। পুলিশ হেফাজত নাকি জেল হেফাজত— বিচারক কী নির্দেশ দেবেন? সেই নির্দেশ ‘রিজার্ভ’ হয়ে গেল এক বার। রোদ্দূর তখনও ভাবলেশহীন। যে ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে রোদ্দূর অভিযুক্ত, মামলার তদন্তকারী আধিকারিক সেই ভিডিয়ো সংবলিত একটি পেনড্রাইভ বিচারককে দিতে গেলেন। আদালতে এতটাই ভিড় যে, তাঁকেও ভিড় ঠেলে ঠেলেই যেতে হল বিচারকের সামনে।

রোদ্দূরের নিষ্ক্রমণ

সওয়াল-জবাবের শেষে রোদ্দূর রায়কে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন বিচারক। বিকেল ৪টে ৫৬ মিনিট নাগাদ কোর্ট লকআপ থেকে বার করে ফের সেই টাটা সুমোতে তোলা হল রোদ্দূরকে। পাশে সেই সাদা পোশাকের পুলিশ। রোদ্দূরের কাঁধে হাত তাঁর।

রোদ্দূরের বচন

মোট ১৬৩ মিনিট আদালতে থাকলেন। নীরবে। এই প্রথম রোদ্দূর কথা বললেন। ডান হাত পুলিশের হাতে। তর্জনী আর কনিষ্ঠা বাদে বাকি সব আঙুল ভাঁজ করে বাঁ-হাতটা উপরের দিকে উঁচিয়ে রোদ্দূর বললেন, ‘‘শিল্প আর রাজনীতি গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমি অপরাধী নই।’’ ব্যস ওইটুকুই। পিছনের আসনে রোদ্দূরকে বসিয়ে আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ডব্লিউবি ০৭ জে ১৯১১ নম্বরের সুমো।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement