আরজি-কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শামিল পড়ুয়া চিকিৎসকেরা। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী পড়ুয়া চিকিৎসকদের একটাই দাবি, নির্যাতনের ঘটনার বিচার। আনন্দবাজার অনলাইনকে তাঁরা স্পষ্টই জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ‘হুমকি’-তে তাঁরা আমল দেননি। এখন ‘ব্যাখ্যা’-তেও কান দিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি নিয়ে পদক্ষেপ করুক সরকার, এটাই এখন তাঁদের দাবি।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ো রোডের জমায়েতের বক্তৃতা নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। অভিযোগ উঠেছে, তিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারীদের ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন। এক দিন পর মমতা জানিয়েছেন, তাঁর বক্তৃতার ‘অপব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এক পড়ুয়া চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকিতেও আমল দিইনি। এখন তাঁর এই ব্যাখ্যাতেও আমল দিচ্ছি না।’’ ওই আন্দোলনকারী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিচার চান। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যায় যেতে চাইছি না। আমরা পরিষ্কার বলছি, আমাদের বিচার চাই। আমাদের যে চার দফা দাবি, তা নিয়ে কী বলতে চান, সেটা বলুন। এই দাবি নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা হোক।’’ আন্দোলনকারীরা চিকিৎসককে নির্যাতন এবং খুনের অভিযোগের বিচারের পাশাপাশি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারেরও ইস্তফা চেয়েছেন। এই দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার মেয়ো রোডে টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান মুখ্যমন্ত্রী। যে জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিইনি। কারণ, ওঁরা বন্ধুর জন্য আন্দোলন করছেন। দিল্লিতে কিন্তু ওঁরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছিলেন। যে কারণে সুপ্রিম কোর্টকে বলে দিতে হয়েছে, ডাক্তারেরা কাজে ফিরলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।’’ বক্তৃতা আরও কিছু এগোনোর পরে মমতা বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি আমার সমর্থন আছে। কিন্তু আপনাদের একটু মানবিক হওয়ারও আবেদন করব। সুপ্রিম কোর্টও আপনাদের অনুরোধ করেছে (কাজে ফিরতে)। অনেক গরিব মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে মারা গিয়েছেন।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলোকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেব না। আপনাদের ক্ষোভ আছে। অভিমান আছে। আমি সেটা বুঝি। কিন্তু এ বার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন।’’ মমতা আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের মানবিক মুখ রয়েছে। আমরা চাই না, কারও সারা জীবনটা নষ্ট হোক। আমরা যদি এফআইআর করি বা কোনও আইনি ব্যবস্থা নিই, তা হলে আপনাদের কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভিসা, পাসপোর্টে অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি তা চাই না। আমি চাই আরও ভাল ভাল ডাক্তার তৈরি করতে।’’ কাজে ফেরার আবেদনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যে সুরে জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, তাকে ‘প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি’ হিসাবে দেখেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসক পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে মমতা জানান, তাঁর ওই বক্তৃতার ‘অপব্যাখ্যা’ হয়েছে। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও দুষেছেন তিনি। তার পর মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘আমি সবচেয়ে জোরালো এবং স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই যে, পড়ুয়াদের (ডাক্তারি ইত্যাদি) বা তাঁদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি তাঁদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তাঁদের আন্দোলন ন্যায্য। আমি কখনওই তাঁদের হুমকি দিইনি। কিন্তু কিছু মানুষ আমাকে অভিযুক্ত করছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
এই প্রসঙ্গেই আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘হুমকি’ বা ‘ব্যাখ্যা’-য় আমল দিতে চান না তাঁরা। তাঁদের চার দফা দাবি নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করে, সে দিকেই এখন নজর তাঁদের।