—ফাইল চিত্র।
এক সময়ে ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলেন নাসিমা আখতার। তখনকার যন্ত্রণার কথা ভুলতে পারেননি। ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পরে তাই খুশি হয়েছিলেন ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে। তাঁর বিয়ে হয় অসমের ধুবুরি জেলার ছোট পোকালাগি গ্রামে। নাগরিকত্ব পাওয়ার সুখ অবশ্য বেশি দিন সইল না। গত মাসের শেষে যে নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি-র তালিকা প্রকাশ হয়েছে, সেখানে তিনি চলে গিয়েছেন বাতিলের তালিকায়। ভেঙে পড়েছেন নাসিমা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
নাসিমা বলেন, “কত কাল যে কী অসুবিধের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, আমরা জানি। আমাদের কোনও দেশ ছিল না। আবারও আমার নাম নেই তালিকায়।” তাঁর দাদা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “সাবেক ছিটমহলের সবাইকে তো ভারতের নাগরিক করা হয়েছে। তা হলে কেন বোনের নাম নেই।” সাদ্দাম বিজেপি কর্মী। তিনি তাঁর বোনের ওই কথা পৌঁছে দিয়েছেন বিজেপি নেতাদের কাছে। বিজেপির জলপাইগুড়ির পর্যবেক্ষক তথা ছিটমহল আন্দোলনের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব ব্যবস্থা নেওয়ার।”
দিনহাটার সাবেক ছিটমহল মশালডাঙায় সাদ্দামদের বাড়ি। ওই বাড়ি থেকেই বিয়ে হয়ে ধুবুরির ছোট পোকালাগি গ্রামে চলে যান নাসিমা। তাঁর স্বামী আমিনুর হক গ্রামীণ চিকিৎসক। তাঁদের একটি ছোট সন্তান রয়েছে। আমিনুরের পরিবারের প্রত্যেকের নাম রয়েছে নাগরিকপঞ্জিতে। নেই নাসিমার নাম। এই ঘটনায় নাসিমা তো বটেই, হতবাক তাঁর বাবা নৌসাদ আলি, মা আমিনা বিবিও। ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পরে নৌসাদদের সবাই নাম তোলা হয় ভোটার তালিকায়। দেওয়া হয় আধার কার্ড, রেশন কার্ড। সেই সুবিধে পান নাসিমাও। আনন্দে নৌসাদ তো বটেই, সাবেক ছিটমহলের একটি বড় অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। নৌসাদের প্রশ্ন, “সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাগজপত্রের কি কোনও মূল্য নেই?” এক সময় ভারতীয় ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশি ছিটমহল ছিল মশালডাঙা। সেই এলাকার মানুষ সরকারি সুবিধে পেতেন না। অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অধিকার ছিল না। অনেক আন্দোলনের পরে অবশেষে ছিটমহল বিনিময় হয়। সেই থেকে নাসিমারা ভারতীয় নাগরিক। ওই সাবেক ছিটমহলেরই বাসিন্দা বিজেপির যুব মোর্চার কোচবিহার জেলা সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, “এনআরসি নিয়ে কিছু ভুল থাকতে পারে। সময় আছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”