অসহায়: সঙ্কটাপন্ন পুষ্করকে নিয়ে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রওনা দিচ্ছেন বাবা। নিজস্ব চিত্র।
জ্বর নিয়ে শিশুমৃত্যু চলছেই উত্তরবঙ্গে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফের ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে। যদিও এদের মধ্যে একটি শিশুকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। তবে বাচ্চাটির মৃত্যুর শংসাপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেননি বলে অভিযোগ পরিবারের।
এ নিয়ে রবিবার থেকে তিন দিনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১০টি শিশুর মৃত্যু হল। এ দিন এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ শিশু বিভাগের সঙ্গে বৈঠক ডাকেন। সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘জ্বর তো একটা উপসর্গ। অন্য রোগেও সেটা থাকে। তাই সব ক্ষেত্রেই জ্বর, শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে তা নয়। এ দিন মৃতদের মধ্যে দু’জনের ওজন অস্বাভাবিক কম ছিল। এক জনের সেপসিস ছিল। দু’জনের নিউমোনিয়া ছিল।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে মারা যায় ৯ মাসের শিবাংশ শা। বাড়ি আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায়। মৃত্যুর কারণ সিভিয়ার নিউমোনিয়া এবং শক বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ভোরে মারা যায় দেড় মাসের পারচি তিরকেও। বাড়ি নকশালবাড়ির হাতিঘিষায়। কর্তৃপক্ষের দাবি, সেপসিস এবং ওজন কম থাকার জেরেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে মারা যায় এক মাসের শিশু সুদীপ সরকার। বাড়ি মালবাজারের কাঠামবাড়িতে। চিকিৎসকদের দাবি, শিশুটির সিভিয়ার নিউমোনিয়া, শকে মারা গিয়েছে। ওজন অনেক কম এবং ফুসফুসের সংক্রমণ ছিল। বিকেলে মারা যায় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বাসিন্দা দেড় মাসের শিশু সোফিয়া পরভিন। নিউমোনিয়া এবং হৃদরোগে সে মারা গিয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভর্তি ছিল। এ দিন রাতে মারা যায় এক মাস বয়সি শিশু ত্রিয়াংশু মণ্ডল। বাড়ি নিউ জলপাইগুড়ির পূর্ব ধনতলায়। সোমবার তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল। নিউমোনিয়ার সঙ্গে তার মাল্টিঅর্গান ডিসফাংশন সিনড্রোম ছিল বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুষ্কর বালা নামে তিন মাসের শিশুকে। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। পুষ্করের জ্যাঠা জীবন বালার অভিযোগ, শিশুটিকে রবিবার ফালাকাটা হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানানো হয় এখানে পরিকাঠামো নেই। বাচ্চার চিকিৎসা করা যাবে না। বাধ্য হয়ে অসুস্থ শিশুকে বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা। সোমবার গাড়ি ভাড়া করে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ দিন সেখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয়। জীবন বলেন, ‘‘হাসপাতালে তো কোথাও ঠিক চিকিৎসাই মিলল না।’’ ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, সকাল থেকে যে তিন জন মারা গিয়েছে তারা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে মারা গিয়েছে। এ দিন শিশু বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শয্যা আরও ১৪টি বাড়ানো হবে।