Flood

আমপানের পরে সারানো বাঁধ ফের ভাঙল কটালে

কেন সময়মতো বাঁধ মেরামত হয় না, কেনই বা কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শেষ হল না, নতুন করে উঠছে সেই সব প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪০
Share:

সাগরের বটতলা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে এলাকা। ছবি: দিলীপ নস্কর

আমপানের ধ্বংসলীলার রেশ কাটতে-না-কাটতে অমাবস্যার ভরা কটালে ফের নিশ্চিহ্ন হল ঘরবাড়ি। ঘরহারা মানুষের প্রশ্ন, আমপান না-হয় প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু সুন্দরবনের নদীবাঁধ কি ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাসটুকুও প্রতিরোধ করতে পারবে না?

Advertisement

কেন সময়মতো বাঁধ মেরামত হয় না, কেনই বা কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শেষ হল না, নতুন করে উঠছে সেই সব প্রশ্ন। আমপানের পরে যে সব জায়গায় বাঁধ মেরামত হয়েছিল, সেখানেও কোথাও কোথাও ভেঙেছে। ফলে মেরামতির কাজ কেমন হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

পাথরপ্রতিমার গোপালনগর পঞ্চায়েতের ষোলোমারি নদীর বাঁধ ভেঙেছিল আমপানে। কটালের জলোচ্ছ্বাসে ফের ক্ষতি হয়েছে বাঁধের। কোথাও দশ ফুট, কোথাও বিশ ফুট মাটির বাঁধ তলিয়ে গিয়েছে জলে। সেখান দিয়ে গ্রামে নোনা জল ঢুকছে। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, তিন মাস যেতে-না-যেতেই যদি বাঁধ ধুয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তবে সে বাঁধ মেরামতের মানে কী!

Advertisement

জি প্লটের বিজেপি নেতা অশোক বেরার অভিযোগ, ‘‘প্রতি বছর ঠিক বর্ষার মুখে বাঁধে মাটি ফেলা হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা জলে ধুয়ে যায়।’’ পাথরপ্রতিমার তৃণমূল বিধায়ক সমীর জানা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘টুকরো গোপালনগরে গ্রামের কাছে কিছুটা বাঁধ ভেঙে গেলেও রিং বাঁধ থাকায় এলাকায় জল ঢুকতে পারেনি।’’

কটালে সাগর ব্লকের প্রায় সমস্ত নদী ও সমুদ্রবাঁধ কোথাও-না-কোথাও ভেঙেছে। নোনা জলের তলায় হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি, মাছের পুকুর, পানের বরজ, ঘরবাড়ি। অনেককে উঁচু বাঁধ, স্কুল, ক্লাব বা ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

সাগর ব্লকে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধসপাড়া সুমতিনগর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায়। মুড়িগঙ্গা নদীবাঁধ এখনও পর্যন্ত ১ কিলোমিটারের বেশি ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাগরের তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার দাবি, ‘‘পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

বাসিন্দাদের অবশ্য ক্ষোভ অন্য। কেন পাকা বাঁধ এত দিনেও তৈরি করা গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। কাকদ্বীপ সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কল্যাণ দে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় দল এসে বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি দেখে অর্থ বরাদ্দ করার কথা। তার পরে কাজ শুরু হবে। তবে বর্ষার সময়ে মাটি না-পাওয়ার ফলে বাঁধ তৈরির কাজে সমস্যা হয়েছে।’’

উত্তর ২৪ পরগনায় ইছামতী, যমুনা, পদ্মা নদীর জল উপচে ঢুকেছে গ্রামে। স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট পঞ্চায়েত এলাকার পঞ্চাশটির বেশি পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে। ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েতের পার্শেমারি, বানতলা স্লুইস গেটের পাশ দিয়ে গ্রামে জল ঢুকছে। বিদ্যাধরী নদীবাঁধের অবস্থাও বহু জায়গায় খারাপ। যদিও বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”

এ দিকে শুক্রবারও ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে দিঘা ও শঙ্করপুরে। তার জেরে রামনগর-১ ব্লকের চাঁদপুর, ক্ষীরপাল, কায়মা, শঙ্করপুর এলাকা প্লাবিত হয়। রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে চারশো জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চাঁদপুর এবং জলধায় আয়লা কেন্দ্রে তাঁদের থাকা এবং রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ ভরা কটালে জোয়ারের জল ঢুকে শুক্রবার তমলুক শহরের রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী ১৮, ১৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement