মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ছবি ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। (ডান দিকে) ফিরহাদ হাকিম। ছবি: ফেসবুক।
মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের নিয়ে যে বিরূপ মন্তব্যই করুন না কেন, ‘ঘরে’ই ভিন্ন সুর।
চর্চার কেন্দ্রে মূলত তিন জন— স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কন্যা শাব্বা এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সমর্থনে একটি মিছিলে আবেশের ছবি নিয়ে বৃহস্পতিবার চর্চা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আবেশ কেপিসি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের ছাত্রনেতা। ফলে ছাত্রনেতা হিসাবেই তিনি মিছিলে হেঁটেছেন।
ওই একই হাসপাতালে চিকিৎসক শাব্বা। তিনিও ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এমনকি মেয়র ববি হাকিমও ফেসবুক পোস্টে ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের গণশত্রু বলে মন্তব্য করেন।
ফেসবুকে বুধবার কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদও লিখেছেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা সাধারণ মানুষের কাছে ভগবান। সেই ভগবান যদি কাজ বন্ধ রাখেন, আমরা সাধারণ মানুষ বাঁচব কী করে! যাঁরা ডাক্তারবাবুদের গায়ে হাত দিয়েছেন, চিকিৎসায় গাফিলতি সন্দেহ করলে তাঁরা নির্দিষ্ট উপায় অবলম্বন করতে পারতেন। তা না করে যাঁরা ডাক্তারবাবুদের পেটান, তাঁরা গণশত্রু এবং আদালতের কাছে দাবি থাকবে, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক, যাতে ভবিষ্যতে ডাক্তারবাবুদের গায়ে কেউ হাত দেওয়ার সাহস না পায়।’’
ওই দিনই ফেসবুকে শাব্বা লেখেন, ‘‘সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর বয়কট করেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু জরুরি বিভাগে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মানবিকতার কারণে আমরা অন্য পেশার মতো কাজ বন্ধ করতে পারি না। যদিও বাস বা ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়, তবে ট্যাক্সি চালক-বাসচালকও আপনাকে পরিষেবা দেবেন না, তা পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।’’
এনআরএস-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা স্তব্ধ। রোগীদের ‘দোষ’ কী, সে প্রশ্ন উঠেছে। ফিরহাদ-কন্যা লিখেছেন, ‘‘যাঁরা বলছেন, অন্য রোগীদের কী দোষ, তাঁরা দয়া করে সরকারকে জিজ্ঞেস করুন, সরকারি হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাঁরা কেন ডাক্তারদের নিরাপত্তা দিতে পারলেন না। জিজ্ঞেস করুন, যখন দু’টি ট্রাকে করে গুণ্ডারা এল, কেন বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হল না। কেন হাসপাতাল চত্বরে গুণ্ডারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করার অধিকার আমাদের রয়েছে। নিরাপদে কাজ করার অধিকার আমাদের রয়েছে’। পোস্টটির শেষে বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসাবে তিনি লিখেছেন, ‘‘একজন তৃণমূল সমর্থক হিসাবে আমাদের নেতৃত্বের নীরবতা দেখে আমি খুবই লজ্জিত।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ‘ভরসা’ ফিরহাদের কন্যা হিসাবে এমন পোস্ট! শাব্বার জবাব, ‘‘আমি তৃণমূলের সমর্থক। তবে আমি একজন চিকিৎসকও। সেই সত্তা থেকেই আমি চিকিৎসকদের পাশে।’’ এ দিন দুপুরে এসএসকেএম’-এ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শাব্বা। বলেছেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুবই শ্রদ্ধা করি। তা অটুট।’’ বাবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ-কন্যা জানান, বাবা তাঁর নিজস্ব মত জানিয়েছেন।
তৃণমূল সাংসদ-কাউন্সিলর শান্তনু সেনের স্ত্রী, চিকিৎসক কাকলি সেনও ফেসবুকে জানিয়েছেন, চিকিৎসক নিগ্রহের বিরুদ্ধে সরকার বা সেলিব্রিটি বা সংবাদমাধ্যম পাশে দাঁড়াবে না। চিকিৎসকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এনআরএস কাণ্ডে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিও করেছেন তিনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।