সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণকুমার চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তদন্তের গতি নিয়ে একাধিক বার সিবিআইয়ের সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়। তাঁর জীবদ্দশায় ‘আসল অপরাধী’ ধরা পড়বে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তদন্তের ‘ধীর গতি’ নিয়ে অসন্তোষের সুর শোনা গিয়েছে আরও কয়েক জন বিচারপতি এবং বিচারকের গলায়। এই প্রেক্ষাপটে শনিবার সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে কার্যত অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণকুমার চট্টোপাধ্যায়। নির্দেশনামায় সেই অসন্তোষ উল্লেখও করেছেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক চট্টোপাধ্যায়। বলেছেন, এফআইআরে নাম থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার সদুত্তর সিবিআই দিতে পারেনি। এই মামলায় ধৃত নীলাদ্রি ঘোষের টাকা নেওয়ার কথা তদন্তকারীরা জানালেও, সেই টাকা কারা দিয়েছিলেন, তার সদুত্তরও মেলেনি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করানোর ক্ষেত্রেও এ ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের গাফিলতি আছে বলে নির্দেশনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ, তদন্তের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আগের শুনানিতে দেখেছি, প্রতারিতরা বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ হল, যত দ্রুত সম্ভব ওই গোপন জবানবন্দি বিচারকের সামনে নথিবদ্ধ করা। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা ‘চুপ করে বসে আছে’। তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে, এ ব্যাপারে ১৫ দিন দেরি হয়ে গিয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, টাকা দিয়ে গ্রুপ-সি পদে চাকরি পেয়েছেন এবং হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে, এমন কয়েক জনকে সম্প্রতি ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আদালতের উল্লেখিত ৮৪২ জনের বাইরে আরও ১০ জনকেও সিবিআই তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা, তৃণমূল যুব নেতা (এখন বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ এবং বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলকে আলিপুর কোর্টে হাজির করানো হয়। পেশ করা হয় কেস ডায়েরিও। সেই ডায়েরি পড়ে বিচারক চট্টোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘প্রতিদিনই একই কথা বলছেন। দুর্নীতিতে জড়িত সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? আমি আশাহত। তদন্তের অগ্রগতি মানে একটি বৃত্তকে সম্পূর্ণ করা। আপনারা তা করতে পারছেন না। প্রথম দিকে অর্ধবৃত্ত হয়েছিল। এখন দেখছি, প্রায় সোজা হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। এ বার আমি মুখে কিছু বলব না। আমার কলম যা বলার বলবে।’’ শুধু তদন্ত চলছে, এই যুক্তি দিয়ে সিবিআই ধৃতদের কত দিন আটকে রাখবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারক।
জামিনের আর্জি জানাতে গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি না-হওয়াকেই হাতিয়ার করেছেন ধৃতদের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, সিবিআই নানা অভিযোগ করলেও, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে পারছে না। সেই দাবির বিরোধিতা করতে গিয়ে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বলেন, ‘‘তদন্ত হয়েছে। একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে নীলাদ্রি-মামলায় এক সরকারি কর্মী আছেন। তাঁকে শনাক্ত করা গিয়েছে।’’
এ দিন আদালতের বাইরে আবার জীবনকৃষ্ণ দাবি করেছেন যে, সিবিআই তাঁর মোবাইল ফোন থেকে কোনও তথ্য পায়নি। আবার, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরানো নিয়ে ‘আক্ষেপ’ ঝরেছে তাপস মণ্ডলের গলায়। একই সঙ্গে, কেন গোপাল দলপতিকে সিবিআই গ্রেফতার করছে না, তার উত্তর ‘কুন্তল দিতে পারবে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিবিআইয়ের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও, শেষমেশ বিচারক ধৃতদের জামিন দেননি। জীবনকৃষ্ণকে ১১মে পর্যন্ত এবং কুন্তল, তাপস এবং নীলাদ্রিকে ১২মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।