সঞ্জয় রায়কে আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়। সোমবার দোষী সঞ্জয় রায়ের শাস্তি ঘোষণা করতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। আদালতের এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারছেন না নির্যাতিতার বাবা-মা। বিচারকের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা অবশ্য প্রশ্ন তোলেননি। বরং ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের উপর। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণ করতে আসলে ব্যর্থ হয়েছে সিবিআই। সেই কারণেই বিচারক সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেননি।
সঞ্জয়কে আরজি কর মামলায় শনিবারই দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদহ আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) ধারায় তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল। সোমবার বিচারক জানান, তিনটি ধারাতেই সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আমৃত্যু জেলে থাকতে হবে তাঁকে। এর পরেই বিচারক জানিয়ে দেন, এই ঘটনাকে তিনি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মনে করছেন না। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষিত হল। ওকে খুন করা হল। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়? আসলে এটা সিবিআইয়ের ব্যর্থতা। ওরাই এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে প্রমাণ করতে পারল না।’’
নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আমরা এখনও বিচার পাইনি। বিচারের প্রথম ধাপ পার করলাম মাত্র। বিচার পাওয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিলেন বিচারক। উনি যা ভাল মনে করেছেন, তা-ই করেছেন।’’ মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং তাঁর খুনের জন্য তাঁর পরিবারকে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নির্যাতিতার বাবা আদালতের ভিতরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষতিপূরণ নিতে চান না। বাইরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ নেব না। বিচারককে বলেছি। আমরা তো এ ভাবে আমাদের মেয়েকে বিক্রি করতে পারব না। তাই টাকা নিতেই পারব না। প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।’’
নির্যাতিতার মায়ের কথায়, ‘‘আমি মনে করি, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। প্রকৃত দোষী ধরা পড়ুক। তা হলেই আমরা খুশি হব।’’ সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়েছিলেন? নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘সঞ্জয়ের কিছুই চাইনি আমরা। বিচারক যা ভাল বলে মনে করেছেন, করেছেন। এটাকে আমরা সিবিআইয়ের ব্যর্থতা হিসাবে দেখছি।’’
সিবিআইয়ের তদন্তে আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই ঘটনার চার্জশিটে তদন্তকারী সংস্থা একমাত্র সঞ্জয়কেই দোষী বলে চিহ্নিত করেছিল। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বা টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে তাঁরা গ্রেফতার করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি। নির্যাতিতার বাবা-মা আদালতে জানান, একা সঞ্জয়ের পক্ষে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয় বলে তাঁদের মনে হয়। আরও কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। সিবিআইয়ের আরও নিখুঁত এবং বিস্তারিত তদন্ত করা উচিত বলে জানান তাঁরা।