Local Train Cancellation

ভিড়ের চাপে ওঠা যাচ্ছে না ট্রেনে, পর পর লেট! তবু রেলের দাবি, ‘খুব একটা খারাপ নয় পরিস্থিতি’

লোকাল ট্রেনের যাত্রিধারণ পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনের ১-৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে, জানিয়েছিল রেল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ১২:২২
Share:

সকাল থেকে এ রকমই বাদুড়ঝোলা ভিড় শিয়ালদহ শাখার বহু স্টেশনে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

লোকাল ট্রেন বাতিল থাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিয়ালদহের মেন এবং বনগাঁ শাখার যাত্রীরা। একের পর এক স্টেশনে ভিড়ের ঠেলায় নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। এমনকি, ভিড়ের চাপে খড়দা এবং টিটাগড় স্টেশনের মাঝে চলন্ত ট্রেন থেকে এক অল্পবয়সি ছেলে লাইনের উপর পড়েও গিয়েছেন বলে খবর। কিন্তু এমন অবস্থায় রেল পাল্টা দাবি করল, যাত্রীদুর্ভোগের কথা যেমন ভাবে বলা হচ্ছে আদৌ পরিস্থিতি তেমন নয়। কিছু ট্রেন লেটে চলছে ঠিকই। তবে অবস্থা এতটাও খারাপ নয়।

Advertisement

শহরতলির লোকাল ট্রেনের যাত্রিধারণ পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, বলে আগেই জানিয়েছিল পূর্ব রেল। আর সেই কারণে বেশ কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল থাকবে তা-ও বলা হয়েছিল। কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করার কথা জানানো হয়। তবে কোন কোন ট্রেন বাতিল থাকবে, কোন কোন ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হবে, সে সম্পর্কে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কিছু জানায়নি রেল। যার জেরে শুক্রবার সকালে স্টেশনে এসে সমস্যায় পড়তে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগ, কোন কোন ট্রেন বাতিল থাকবে, তা রেলের তরফ থেকে স্পষ্ট করে কিছু না বলায় এই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ব্যস্ত সময়ে ট্রেন না পাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে সকাল থেকেই। অনেকেই আবার ট্রেন ছেড়ে সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন। মূলত, নৈহাটি, কল্যাণী, ব্যারাকপুর, রানাঘাট, শান্তিপুর, বনগাঁ, হাসনাবাদ শাখার যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।

Advertisement

যাত্রীদের দাবি, ট্রেন বাতিল সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা হচ্ছে না স্টেশনে। এমনকি, কোন ট্রেন কত দেরিতে চলছে তা নিয়েও কোনও তথ্য দিচ্ছে না রেল। এর ফলেই সমস্যা আরও বেড়েছে। মধ্যমগ্রাম স্টেশনে দাঁড়ানো এক যাত্রীর কথায়, ‘‘সকালে স্টেশনে এসে দেখি অনেক লোক ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ আধ ঘণ্টা, কেউ এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। আগের ট্রেনটায় বাদুড়ঝোলা ভিড় ছিল। চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না।’’ কখন গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন সেই চিন্তাই ঘুরছে যাত্রীদের মধ্যে।

এমনিতে ট্রেন নেই, তার উপর ভ্যাপসা গরম— এর জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় যাত্রীদের। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গরম এবং ভিড়ের কারণে। শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন থেকে নামা এক যাত্রীর কথায়, ‘‘প্রায় প্রতিটি সিগন্যালে ট্রেন দাঁড়িয়েছে। কখনও ১০ মিনিট, কখনও আবার ১৫-২০ মিনিটও। ট্রেনের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় থাকায় গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শিয়ালদহের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ থাকবে তা রেল কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিলেন। যাত্রীদের প্রশ্ন, কোন কোন লোকাল ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে, তা আগে থেকে কেন জানানো হল না। উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে রেলের তরফে জানানো হয়, কোন কোন ট্রেন বাতিল এবং যাত্রাপথ নিয়ন্ত্রিত। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তা জানায়নি রেল। এ ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ যাত্রীরা।

যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, কেন বার বার শিয়ালদহ শাখায় এ ভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে? মাস কয়েক আগেই দমদম স্টেশনে ইন্টারলকিং কাজের জন্য প্রায় টানা দু’দিন ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল শিয়ালদহ মেন এবং বনগাঁ শাখায়। সেই সময় এই কাজ করা হয়নি কেন, প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা। তা ছাড়া করোনার সময় প্রায় সকলেই যখন ঘরবন্দি অবস্থায় ছিলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল, তখন কেন এই কাজ করার কথা মনে পড়েনি রেলের? বনগাঁ শাখায় নিত্য যাতায়াত করা এক যাত্রীর একাংশের কথায়, ‘‘এত বড় করোনাকাল গেল, তখন এই প্ল্যাটফর্ম বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়নি কেন? দীর্ঘ দিন তো যাত্রী পরিষেবা বন্ধ ছিল। সেই সময় এই কাজ করা যেত না? এমন তো নয়, সেটা খুব বেশি দিন আগের কথা। ১২ কামরার ট্রেন যে শিয়ালদহের সব প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়তে পারে না, সেটা তো রেল কর্তৃপক্ষ তখনও জানতেন। শিয়ালদহের ভিতরের চত্বরের ভোল তো তখন পাল্টানো হয়েছে। কিন্তু এই কাজ করা হয়নি। এখন বার বার পরিষেবা বন্ধ করে কেন এই সব কাজ করছে রেল?’’

রেলের তরফে পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় জানানোর কথা পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানাতে পারেননি, কোন কোন ট্রেন বাতিল বা যাত্রাপথ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে তিনি বললেন, “মাত্র পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ। ৬ থেকে ১৪ নম্বর দিয়ে আমরা ট্রেন চালাচ্ছি। যাত্রীদের সামান্য সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা অতিরিক্ত মেট্রো চালাচ্ছি। যে সব ট্রেন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে, সবই ১২ কামরার। একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করছি। রেল সব সময় যাত্রীদের পাশে আছে।”

যাত্রীদুর্ভোগ যে চরম মাত্রায় হচ্ছে, রেল তা মানতে নারাজ। তাদের মতে, ‘সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটু তো এ সব মানতে হবে’! কিন্তু যাত্রীদের বক্তব্য, প্রতি মাসেই যদি নিয়ম করে এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা হলে তা অসহনীয়ই হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, রেল তথ্য দিয়ে কোনও রকমের সহযোগিতা করে না বলেও যাত্রীদের অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement