Rampurhat Murder

Rampurhat Clash: বগটুই-কাণ্ডে বীরভূমের কিছু উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সিবিআইয়ের

সিবিআই সূত্রের খবর, পুলিশের একাধিক গাফিলতি সামনে উঠে এসেছে। তার অন্যতম, ভাদুর আততায়ীদের ধরার দিকেই স্থানীয় পুলিশ বেশি জোর দিয়েছিল। সেই সময় বগটুই গ্রাম থেকে গিয়েছিল ‘অরক্ষিত’ অবস্থায়। হামলাকারীরা বিনা বাধায় মহিলা-শিশু সহ আট জনকে খুন করে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২২ ০৬:৫২
Share:

সিবিআইয়ের ডিআইজি অখিলেশ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

আইসি সাসপেন্ড হয়েছেন, এসডিপিও গিয়েছেন কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে। বগটুই-কাণ্ডে গাফিলতির জন্য রামপুরহাটের এই দুই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এ বার বীরভূম জেলার উচ্চ পদস্থ কয়েক জন পুলিশকর্তার ভূমিকাও সিবিআইয়ের আতসকাচের নীচে।

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্ট শুক্রবারই বগটুই গণহত্যার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সোমবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের ঘটনার পরেই সিউড়িতে, পুলিশ সুপারের অফিস (হেড কোয়ার্টার) থেকে ধাপে ধাপে পুলিশ বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ভাদু শেখ বোমায় জখম হওয়ার পরে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে ছোটেন। ঘটনার খবর পেয়ে সদর দফতর থেকে জেলা পুলিশের বড় কর্তারা বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন।

সেই ঘটনাস্থল থেকে বগটুই গ্রাম মেরেকেটে এক কিলোমিটার। ভাদুকে খুনের পরে এক ঘণ্টার মধ্যেই বগটুই গ্রামে বেছে বেছে ভাদু-বিরোধী হিসেবে পরিচিতি, এমন বেশ কয়েক জনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় নিজেও ঘটনার পরে জানিয়েছিলেন, যা কিছু ঘটেছে খুনের এক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটেছে। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, ওই সময় কাছেই উপস্থিত ছিল পুলিশ বাহিনী। জেলা সদর থেকে শতাধিক পুলিশকর্মী এবং রামপুরহাট ও নলহাটি থানার যৌথ বাহিনীও গ্রামের আশেপাশে ছিল। সে ক্ষেত্রে পরপর বাড়িতে যখন বোমাবাজি চলছে ও আগুন লাগানো হচ্ছে, তখন পুলিশ এত কাছে থাকা সত্ত্বেও কেন গ্রামে গিয়ে তা ঠেকাল না, সে প্রশ্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। একই সঙ্গে জেলার একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তা হাজির থাকার পরেও এত বড় ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের এত কাছে পুলিশ বাহিনী থাকার পরেও দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ করা হয়নি কেন, এই প্রশ্ন থাকছেই।’’

Advertisement

তবে, রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটের কর্তাদের প্রাথমিক তদন্তে রাতে ওই গ্রামে বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর জেলার পুলিশ কর্তাদের কাছে পৌঁছয়নি বলে জানানো হয়েছিল। সিটের এক সদস্য বলেন, ‘‘মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ওই রাতের হামলার খবর পুলিশ কর্মীদের কাছে ছিল না বলে একাধিক আধিকারিক জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই বয়ান যাচাই করার সময় পাওয়া যায়নি।’’

হামলার ঘটনায় রামপুরহাটের তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার রাতে মোবাইল ফোনে আনারুলের সঙ্গে জেলার একাধিক পুলিশকর্তা ও প্রভাবশালী নেতাদের কথা হয়েছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আনারুলকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।

সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ‘টাওয়ার ডাম্পিং’ করা হবে। ঘটনার রাত আটটার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় কত মোবাইল ফোন ব্যবহার হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মধ্যে কথোপকথন হয়ে থাকলে তার কল রেকর্ড উদ্ধার হবে।’’ ওই কর্তার দাবি, এটা করতে পারলে সে রাতে জেলার পুলিশ কর্তা, রামপুরহাট ও নলহাটি থানার পুলিশকর্মীদের অবস্থান স্পষ্ট হবে। ঘটনাস্থলে কোন কোন পুলিশ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন তা জানা যাবে। ওই সব পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ঘটনার পর থেকে কোন কোন ব্যক্তির ফোনে কথা হয়েছিল, তা-ও সামনে আসবে।

সিবিআই সূত্রের খবর, এর পরে ধাপে ধাপে এই ঘটনায় জড়িতদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনেক রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকল, সেই বিষয়ে প্রভাবশালীর যোগের তথ্য প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের খবর, পুলিশের একাধিক গাফিলতি সামনে উঠে এসেছে। তার অন্যতম, ভাদুর আততায়ীদের ধরার দিকেই স্থানীয় পুলিশ বেশি জোর দিয়েছিল। সেই সময় বগটুই গ্রাম থেকে গিয়েছিল ‘অরক্ষিত’ অবস্থায়। হামলাকারীরা বিনা বাধায় মহিলা-শিশু সহ আট জনকে খুন করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement