ক্রমবর্ধমান খরচ বড় বালাই! তাই আয়ের নতুন পন্থা পাওয়ার আশায় রেল ১০ বছর আগে যে-সংস্থা গড়েছিল, সেই ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (আইআরএসডিসি) গুটিয়ে ফেলার তোড়জোড় চলছে। ঝকঝকে স্টেশন তৈরি করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য ২০১২ সালে ঘটা করে আইআরএসডিসি গড়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন স্টেশন উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরির মাঝপথেই ওই সংস্থা গোটানোর বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সোমবার নির্দেশিকা জারি করে সংস্থা গোটানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে রেল বোর্ড।
এর আগে গুজরাতের গাঁধীনগর এবং মধ্যপ্রদেশে ভোপাল সংলগ্ন হাবিবগঞ্জ স্টেশন পুনর্নির্মাণ করেছে আইআরএসডিসি। আরও অন্তত ৪০টি স্টেশন উন্নয়নের পরিকল্পনা করা এবং তার রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থাকে। তার মধ্যে দিল্লি, নাগপুর, গ্বালিয়র, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসের মতো স্টেশনও ছিল। ওই সব কাজের জন্য ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজ়াল’ বা আগ্রহপত্র দাখিলের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওই সমস্ত কাজই সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে জ়োনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রেলের খবর, আইআরএসডিসি-তে রেলের পরিকাঠামো নির্মাণ সংস্থা ইরকন এবং রেলওয়ে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (আরএলডিএ) অংশীদারি ছিল। গুটিয়ে ফেলা সংস্থাটি এসপিভি বা স্পেশাল পারপাস ভেহিক্ল হিসেবে কাজ করছিল। এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে বিভিন্ন স্টেশনের অধীনে থাকা জমি বাণিজ্যিক নির্মাণের কাজে ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আরএলডিএ। এবং সেই তৎপরতায় দু’টি সংস্থার কাজের মধ্যে সংঘাতের পরিসর তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এর পরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল আরএলডিএ এবং আইআরএসডিসি-র মধ্যে যে-কোনও একটি সংস্থাকে রাখার সুপারিশ করেন। তার পরেই দ্বিতীয় সংস্থাটিকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে রেল বোর্ড সূত্রের খবর। মাসখানেক আগে, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অর্গানাইজেশন ফর অল্টারনেট ফুয়েল নামে একটি সংস্থা গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থার তত্ত্বাবধানে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। আপাতত ওই কাজের দায়িত্ব উত্তর রেলকে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের আর্থিক উপদেষ্টা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) এবং ইরকনকেও মিশিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। আরভিএনএল রেলপথ, সেতু ও সুড়ঙ্গ নির্মাণ করে। রেলের ভবন তৈরি করে ইরকন। তাই রেলকর্তাদের বক্তব্য, আরও একটি সংস্থাকে গুটিয়ে ফেলা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এক রেলকর্তা বলেন, "পরিচালন ব্যবস্থায় খরচ কমিয়ে দক্ষতা আমদানি করতেই বিভিন্ন সংস্থাকে মেশানো অথবা অপ্রয়োজনীয় সংস্থা বন্ধ করা হচ্ছে।"
যদিও রেলের আধিকারিকদের একাংশের আশঙ্কা, এ ভাবে সংস্থা বন্ধ করে দিলে বিভিন্ন চালু প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।