R G Kar Hospital Incident

‘পুলিশ ফোনে বলেছিল, আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, দ্রুত চলে আসুন’! প্রশ্ন তদন্তকারীর ভূমিকায়

পুলিশের বিরুদ্ধে এ দিনও অভিযোগ করেছে মৃতার পরিবার। মৃতার মায়ের দাবি, ‘‘ময়নাতদন্তের পরে মেয়ের দেহ নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে যায় পুলিশ। অথচ, আমরা তখনও হাসপাতালে দেহ পাওয়ার অপেক্ষা করছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৫৩
Share:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

একটি খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন শুক্রবার সকাল থেকেই উঠতে শুরু করেছিল, তা-ই শনিবার দিনভর ফিরল বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে।

Advertisement

তদন্ত কোন পথে এগোল, কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতারি হল, সে নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব এ দিন সরকারি ভাবে মেলেনি। সাংবাদিক বৈঠকে একাধিক প্রশ্নের উত্তর পুলিশকর্তারা কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ধর্ষণ এবং খুনের মতো সংবেদনশীল ঘটনায় সমস্ত কিছু প্রকাশ করা যাবে না। যদিও এই সংবেদনশীল ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামা চিকিৎসকদের ঠেকাতেই পুলিশকে দেখা গিয়েছে মারমুখী মেজাজে। টেনেহিঁচড়ে, লাঠিপেটা করে, চুলের মুঠি ধরে ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনকারীদের অনেককেই সরিয়েছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, এমন একটি ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামা কাউকে কি পুলিশ এই ভাবে মারতে পারে?

পুলিশের বিরুদ্ধে এ দিনও অভিযোগ করেছে মৃতার পরিবার। মৃতার মায়ের দাবি, ‘‘ময়নাতদন্তের পরে মেয়ের দেহ নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে যায় পুলিশ। অথচ, আমরা তখনও হাসপাতালে দেহ পাওয়ার অপেক্ষা করছি।’’ মৃতার বাবার অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার সকালে পুলিশ আমাদের ফোন করে বলেছিল, আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, দ্রুত চলে আসুন। অথচ আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি, অর্ধনগ্ন অবস্থায় ওর মৃতদেহ পড়ে আছে। গায়ে একাধিক মারের ছাপ স্পষ্ট। যার কোনওটাই আত্মহত্যা করলে হয় না। পরে ময়না তদন্তের রিপোর্ট শুনে বুঝলাম, পুলিশ কতটা ভুল খবর দিয়েছিল।’’ পুলিশ কেন আত্মহত্যার দাবি করেছিল? পুলিশ কর্তাদের কেউই মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

এ দিন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সাংবাদিক বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ধৃতের পেশা কী? কী করে সে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে গেল? সেখানে কি তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল? প্রথমে মন্তব্যই করতে চাননি পুলিশ কমিশনার। এর পর তাঁর উত্তর, ‘‘আমাদের কাছে ঘৃণ্য একটা ঘটনার অপরাধী ছাড়া ধৃতের আর কোনও পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’

এর মধ্যেই জানা যায়, ধৃত অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। এটা কি সত্যি? সেই প্রশ্নের উত্তরেও শুধু আগের মন্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেন কমিশনার। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সে যে-ই হোক। এই মুহূর্তে সে একজন অপরাধী।’’ কিন্তু অপরাধীর সম্পর্কে জানাতে পুলিশ কেন এত সঙ্কোচ করছে? উত্তর মেলেনি। জানতে চাওয়া হয়েছিল, ঘটনায় কি আরও কেউ জড়িত? ধৃত কি মত্ত অবস্থায় ছিল? পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ পুলিশ জানায়, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ (১) অর্থাৎ খুন এবং ৬৪ নম্বর অর্থাৎ ধর্ষণের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে।

এ দিন বিকেলের দিকে দেখা যায়, আরজি কর হাসপাতালে যাওয়া আন্দোলনকারীদের অনেককেই বেধড়ক মারছেন পুলিশ কর্মীরা। বাদ যাচ্ছেন না মহিলা আন্দোলনকারীরাও। এক প্রবীণ চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘সরকারি জায়গায় এক জন চিকিৎসক ধর্ষিতা এবং খুন হয়ে গেলেন। তার পরেও পুলিশ এমন মারমুখী হয় কী ভাবে? এতে কি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠবে না?’’ এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ কমিশনার আবারও বলেন, ‘‘অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতি। কোনও ভাবেই পরিস্থিতির রাশ আলগা না করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে বাহিনীকে।’’ রাশ আলগা না করার অর্থ কি মার? উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement