হারাধন কর্মকার। নিজস্ব চিত্র
কাপড়ে বাঁধা কিছু খাবার। আর সঙ্গে একটি হ্যান্ডমাইক। সকাল হলেই মোটরবাইক চড়ে বেরিয়ে পড়েন বেলিয়াতোড়ের যুবক হারাধন কর্মকার। তার পরে সারাদিন এ-গ্রাম সে-গ্রাম ঘুরে মাইক ফুঁকে করোনা নিয়ে সচেতনতার প্রচার করেন। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢললে বাড়ি ফেরেন হারাধন। করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার পরে, এটাই তাঁর রোজনামচা।
বয়স সবে ২১ পেরিয়েছেন হারাধন। সদ্য কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছেন। সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। আর রোজই নিয়ম করেই কোথাও না কোথাও সামাজিক কাজে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেন।
এখন সকাল হতেই হাতে মাইক নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে সচেতনতা প্রচারে ছুটছেন হারাধন। তিনি নেহরু যুবকেন্দ্রের (বাঁকুড়া) এক জন ‘ন্যাশনাল ইউথ ভলান্টিয়ার’।। সেখান থেকে সামান্য কিছু সাম্মানিক পান। ‘জনতা-কার্ফু’র পরে করোনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে বেলিয়াতোড়ের বেশ কিছু অঞ্চল ইতিমধ্যেই চষে ফেলেছেন তিনি।
কলেজে এনসিসি এবং এনএসএস করার সময়ে হাতখরচ বাঁচিয়ে কিনেছিলেন একটি ‘হ্যান্ড মাইক’।। হারাধনের কথায়, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বুঝতে পারি, মানুষ শুধু পুলিশের গাড়িকে ভয় পাচ্ছেন।। করোনাকে নয়। পুলিশের গাড়ি দেখলেই তাঁরা লুকিয়ে পড়ছেন।। পুলিশ চলে গেলেই আবার আড্ডা জমাচ্ছেন। তাই তাঁদের সচেতন করতে বেরিয়ে পড়ি।’’
হারাধন জানান, নেহেরু যুবকেন্দ্র থেকে ‘ইউথ ভলান্টিয়ার’ হিসেবে পাওয়া সাম্মানিকের টাকায় মোটরবাইকের তেল আর প্রচারের খরচ উঠে আসে তাঁর। অনেকেই তাঁর মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেন। ‘‘এ সব করে তৃপ্তি পাই’’, বলেন হারাধন।
বেলিয়াতোড়ে সাইকেল সারানোর একটি দোকান রয়েছে হারাধনের বাবা অশোকবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘সকাল হলেই ‘মাস্ক’ পরে, খাবার নিয়ে ছেলেটা বেরিয়ে যায়। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে কী-কী করতে হবে, তা গ্রামে ঘুরে ঘুরে প্রচার করে। আবার ঘরে ফিরতে ফিরতে প্রায় দিনই সন্ধ্যা হয়ে যায়।’’
বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বেলিয়াতোড়ের বাসিন্দা কালিদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হারাধন এলাকার একজন পরিচিত সমাজসেবী। করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা-প্রচার করে। বেলিয়াতোড়ের প্রায় সবক’টি গ্রামই ও ঘুরে ফেলেছে। কোনও কোনও গ্রামে আবার দু’বার-ও গিয়েছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বেলবনি গ্রামে সচেতনতা প্রচারে গিয়ে একটি পুকুরের পানাও পরিষ্কার করেছেন হারাধন।
বেলিয়াতোড়ের পঞ্চায়েত প্রধান প্রশান্ত নাগের কথায়, ‘‘হারাধনকে ভরসা করি। সচেতনতা প্রচারে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে ও। কোনও সরকারি সাহায্য নেয় না। বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ফোন করে হারাধনকে তাঁদের গ্রামে পাঠানোর অনুরোধ করেন।’’
প্রশান্তবাবুর সংযোজন, ‘‘হারাধনের কথা মানুষ শোনেন।’’