এগিয়ে: ব্লক অফিসের একটি ঘরে ওই চার জন শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র
কর্মীর সঙ্কট ছিল আগে থেকেই। যাঁদের নিয়ে কাজ চলছিল, তাঁদের কয়েকজনও ‘লকডাউন’-এ আটকে পড়েছেন ভিন্ জেলার বাড়িতে। এমন পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লক প্রশাসনের মুশকিল-আসান হয়েছেন কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্লক এলাকার শিক্ষক, ভূমি দফতরের আধিকারিক। পাশের শহর থেকে এগিয়ে এসেছেন কিছু যুবকও।
বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল জানান, রঘুনাথপুর বইমেলার আয়োজন করার সময়ে কিছু শিক্ষকের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তেমনই চার জন ‘লকডাউন’ ঘোষণার পরে যোগাযোগ করেন। জানান, সঙ্কটের সময়ে প্রশাসনের হাতে-হাতে কাজ করতে চান।
ওই চার জন হলেন— শাঁকড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিষেক মিশ্র, নিগমনগর হাইস্কুলের শিক্ষক বীরেশচন্দ্র লায়েক, ডুমুরহিড় হাইস্কুলের শিক্ষক পলাশকুমার হালদার ও বাগতবাড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় সময়ের অভাব নেই। মনে হয়েছিল, এখন সরকার ও প্রশাসনের পাশে থাকাটা জরুরি। তাই কাজ চেয়েছিলাম।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষকেরা এখন ‘হোম কোয়রান্টিন’ লোকজনের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ রাখছেন। তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন জেলায়। দরকারে সাহায্য করছেন প্রশাসনিক ‘কোয়রান্টিন’ পরিচালনায়। ত্রাণ পাঠানোর আগে গ্রামে গিয়ে সরেজমিন দেখে আসছেন কী দরকার, কতটা দরকার। শাঁকড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘‘প্রশাসন যখন যে দায়িত্ব দিচ্ছে, সেটাই করছি।’’
রঘুনাথপুর ১ ব্লক ভূমি দফতরের আধিকারিক বিক্রম মুখোপাধ্যায় সামলাচ্ছেন জয়চণ্ডী পাহাড়ের যুব আবাসে তৈরি হওয়া প্রশাসনিক ‘কোয়রান্টিন’-এর দায়িত্ব। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ভূমি দফতরের আধিকারিক বিক্রমবাবু যেচে এই দায়িত্ব নিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সামলাচ্ছেন সেখানকার দায়িত্ব।
সকালে বেরিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা গড়িয়ে যাচ্ছে। গোড়ায় আতঙ্কিত ছিলেন পরিজনেরা। বিক্রমবাবু, বীরেশবাবুরা বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছে, এটা সামাজিক দায়িত্ব। সেটাই বুঝিয়েছি। এখন বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরেছেন।’’ তাঁরা জানান, কাজের সময়ে যাবতীয় সুরক্ষাবিধি মেনে চলছেন। বাইরে বেরিয়ে কাজ করার সময়ে ‘মাস্ক’ পরে থাকছেন। সমস্যা হচ্ছে না ‘স্যানিটাইজ়ার’ পেতেও।
বিডিও জানান, নানা এলাকায় খাবার পাঠানোর তদারকি অনেকটাই করে দিচ্ছেন রঘুনাথপুর শহরের তিন যুবক— মহেশ তিওয়ারি, সুকান্ত মণ্ডল ও তারকনাথ খাঁ। নিজেরাই এগিয়ে এসে, কোনও পারিশ্রমিক না নিয়ে, রোজ প্রচুর চাল-ডাল-গমের প্যাকেট তৈরি করে চলেছেন। বিডিও বলেন, ‘‘আমাদের অনেক নিশ্চিন্ত করেছেন এই কয়েকজন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)