শঙ্কর িবশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
দিল্লি ও হরিয়ানা সীমানা লাগোয়া মিথাপুর থেকে বীরভূমের বোলপুর, ন’দিনে ১৩৮৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন সাইকেলে। নেহাতই বাড়ি ফেরার তাগিদে, প্রাক্তন সেনাকর্মী শঙ্কর বিশ্বাসের জীবনের এক নতুন অধ্যায়ও এই ন’টা দিন। সেনাকর্মী হিসেবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে কাজ করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিন্ত এমন অনিশ্চয়তার জীবন তাঁকে এর আগে কখনও তাড়া করেনি।
বছর পঞ্চাশের শঙ্করবাবু এখন বাড়ির কাছেই বাহিরী গ্রামের নিভৃতবাসে আছেন। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ন’টা দিন তাঁর জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষ দিশাহারা হয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটছে শুধু বাড়ি ফেরার তাগিদে। অথচ বাড়ি ফিরে কী খাবে? কী করবে? সবটাই অনিশ্চিত। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা ডায়েরি লেখার কথাও ভেবেছেন তিনি। সেনাবাহিনীতে চাকরির সময়ই দৌড়নো ছিল তাঁর অভ্যাস। বাহিনীর স্পোর্টস-এ নিয়মিত যোগ দিতেন। পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক। চাকরি ছাড়ার পরেও সেই অভ্যাস যায়নি। গত ৬ মার্চ হরিয়ানার গুরগাঁওতে একটি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আর সেই ম্যারাথনে নাম দিতে সেখানকারই মিথাপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন শঙ্করবাবু। করোনাভাইরাসের আবহে ম্যারাথন কমিটি দৌড় প্রতিযোগিতা কয়েকদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দৌড়বেন এই আশায় আত্মীয়ের বাড়িতেই থেকে যান শঙ্করবাবু। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। একসময় লকডাউন ঘোষণা হয় ও তা দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
বাড়ি ফেরার পথ যে বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য তা বুঝতে পেরে প্রথমে কিছুদিন ট্রেন বা সড়ক পথে কোনও ভাবে ফেরা যায় কিনা তার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ঠিক করেন ট্র্যাকে যখন দৌড়নোর দম আছে তখন সেই দমে ভর করে সাইকেলে প্যাডেল করে ঠিক বাড়ি অবধি পৌঁছেও যাবেন। যে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন তাঁর সাইকেলে চেপেই গত ৫ মে রওয়ানা দেন। রাতে পেট্রল পাম্প, নির্মীয়মাণ আবাসনের নীচে কোনও রকমে একটু বিশ্রাম নিয়েই আবার ভোরের আলো ফুটতেই বেরিয়ে পড়েছেন। ন’দিন সাইকেলে সওয়ার হয়ে গত বৃহস্পতিবার বোলপুরে পৌঁছে স্থানীয় কালিকাপুরে সেনাবাহিনীর একটি ছাউনিতে যান। সেখান থেকে নিজেই নিভৃতবাসে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বোলপুর-শ্রীনিকেতনের বিডিও শেখর সাই বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উনি নিজে সচেতনভাবে নিভৃতবাসে থাকার জন্য প্রশাসনকে জানান, সেই মতো প্রশাসনের তরফ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে সরকারি নিভৃতবাসে ১৪ দিনের জন্য রাখা হয়েছে।’’