প্রতীকী চিত্র
দলের বিরুদ্ধে সমাজ মাধ্যমে বিতর্কিত ‘পোস্ট’ করা যাবে না বলে সম্প্রতি জেলা কমিটির বৈঠকে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি। তার পরেও রানিবাঁধের যুব নেতা তথা জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি বিদ্যুৎ দাসের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) নিয়ে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
ওই ফেসবুক ‘পোস্ট’-এ রানিবাঁধ ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাহাতোর একটি বক্তৃতার অংশ তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎবাবু। জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বৃহস্পতিবার এই প্রসঙ্গে বলেন, “রানিবাঁধের ঘটনায় দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ হয়েছে। ওই যুব নেতা ও ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, দলীয় ভাবে নেওয়া হচ্ছে।” তৃণমূল সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে ঝিলিমিলিতে একটি দলীয় সভায় বক্তব্য রাখেন চিত্তরঞ্জনবাবু। দলের একাংশের অভিযোগ, নিজের বক্তব্যে তিনি অঞ্চল সভাপতি ও বুথ সভাপতিদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে দল না করলে অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদের দল থেকে তাড়িয়ে দেবেন বলে প্রকাশ্য মঞ্চে বলেছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু।
দিন দু’য়েক আগে বিদ্যুৎবাবুর ফেসবুক পেজে চিত্তরঞ্জনবাবুর বিতর্কিত মন্তব্যের একটি ‘ভিডিয়ো ক্লিপ’ প্রকাশিত হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে ওই যুবনেতা নিজের মন্তব্যও জুড়েছেন তাতে। পাশাপাশি, দলের জেলা নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘দলের বুথ সভাপতি, বুথকর্মী, অঞ্চল সভাপতিরাই দলের সম্পদ। ব্লক সভাপতির কুরুচিকর মন্তব্য লজ্জাজনক। রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাব। কারণ, জেলা নেতৃত্বের কাছে সুবিচারের জায়গা আছে বলে মনে করি না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক শ্রেণির মানুষ টিকিটের জন্য দল করতে এসেছেন।’’
চিত্তরঞ্জনবাবুর দাবি, “আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি মোটেও কাউকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলিনি। যাঁরা দল বিরোধী কাজ করছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলেছিলাম, এখনই সতর্ক না হলে মানুষই তাঁদের তাড়াবেন।” তাঁর অভিযোগ, “আমি ব্লক সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দলের কিছু লোকজন আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াতে সমাজ মাধ্যমকে হাতিয়ার করছে।” বিষয়টি নিয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন বলে দাবি চিত্তরঞ্জনবাবুর।
এ দিকে জেলা যুব নেতা বিদ্যুৎবাবু বলেন, ‘‘জেলা সভাপতির মন্তব্য দুঃখজনক। আমি শুধু দলীয় কর্মীদের শান্ত থাকার বার্তাই দিয়েছি। ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” তাঁর দাবি, “আমি ব্লক সভাপতির ভিডিয়ো পোস্ট করিনি। সেটি আগেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।” কিছু দিন আগেই তৃণমূলের জেলা কমিটি ও ব্লক সভাপতি পদে রদবদল হয়। তারপরই খাতড়ার তৃণমূল নেতা তথা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত মিত্রের একটি ‘ভিডিয়ো ক্লিপ’ ভাইরাল হয়। সেখানে জয়ন্তবাবু জেলা সভাপতি ও রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন।
সেটি প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার পরেই জেলা কমিটির বৈঠক ডেকে দলের জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, দলের বিরুদ্ধে কোনও কিছু সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই নির্দেশের পরেও রানিবাঁধের ঘটনাটি কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলা তৃণমূলেরই একাংশ। শ্যামলবাবু বলেন, “দলের প্রত্যেকের উপরে আমাদের নজর রয়েছে। দলের নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ কাজ করলে ছাড় পাবেন না।”