দুই মেয়ের সঙ্গে মা। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে খেলার ছলে দুই বোন শিখেছিলেন হাইমলিখ কৌশল। সেটাই যে এ ভাবে কাজে লেগে যাবে, কে জানত! আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া মাকে সুস্থ করে তুললেন কলেজপড়ুয়া দুই বোন। শনিবার বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের পাথরমোড়া গ্রামের ঘটনা। বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় এবং চতুর্থী মুখোপাধ্যায় নামে দুই মেয়ের জন্য প্রাণে বাঁচলেন তাঁদের মা মৌসুমী মুখোপাধ্যায়।
বাড়িতে লজেন্স খাচ্ছিলেন মৌসুমী। আচমকা সেটা তাঁর গলায় আটকে যায়। দমবন্ধ হয়ে কথা বলার শক্তিও চলে যায়। মাকে ওই অবস্থায় দেখে প্রাথমিক ভাবে ঘাবড়ে গেলেও অসুবিধা বুঝতে দেরি হয়নি দুই মেয়ের। মায়ের উপর হাইমলিখ কৌশল প্রয়োগ করেন তাঁরা। বেশ কিছু ক্ষণ চেষ্টা চালানোর পর মায়ের গলা থেকে লজেন্সের টুকরো বার করে আনতে সমর্থ হন বৃষ্টি এবং চতুর্থী। কোনও চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই মাকে সুস্থ করে তুলতে পেরে স্বাভাবিক ভাবে খুশি দুই বোন।
বৃষ্টি বলেন, “মা আমাদের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। মুখে একটা লজেন্স ছিল। আচমকাই কথা বন্ধ হয়ে যায় মায়ের। গলা থেকে অদ্ভুত একটা শব্দ বার হতে থাকে। ধীরে ধীরে জিভ বার হয়ে আসছিল। বুঝতে পেরেছিলাম মা সাধারণ বিষম খাননি। শ্বাসনালীতে লজেন্স আটকে শ্বাসরোধ হয়েছে। দ্রুত আমরা দুই বোন মায়ের উপর হাইমলিখ পদ্ধতি প্রয়োগ করে লজেন্স বার করে আনি। মা আবার স্বাভাবিক হন।’’ চতুর্থী বলেন, “ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখা বেশ কিছু দিন আগে আমাদের গ্রামে একটি অনুষ্ঠান করেছিল। সেই অনুষ্ঠানেই আমরা হাইমলিখ কৌশল শিখেছিলাম। ওই কৌশল শেখা না থাকলে জানি না মায়ের কী হত! আগামিদিনে যাতে এই কৌশল অন্যদেরও শেখাতে পারি, সেই চেষ্টা করব।” মৌসুমীও একই কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দুই মেয়ে এই কৌশল না জানলে হয়তো মারাই যেতাম গতকাল।’’
কী এই হাইমলিখ কৌশল? ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত বলেন, “খাবার বা পানীয় আমাদের গলা দিয়ে পেটে যাওয়ার সময় একটি মাংসপেশি আমাদের শ্বাসনালী আটকে দেয়। শ্বাস নেওয়ার সময় তা খোলা থাকে। কিন্তু খাবার সময় কথা বললে বা মাংসের হাড় থেকে মজ্জা জোরে শুষে খাওয়ার সময় কিছু ক্ষেত্রে খাবার শ্বাসনালীতে গিয়ে শ্বাসরোধ করে দেয়। ফলে রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। কথা বলার শক্তিও থাকে না তখন। অল্প সময়ের মধ্যে রোগী ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই সময় রোগীর শ্বাসনালী থেকে খাবার বার করে আনার জন্য হাতে সময় থাকে মাত্র ৪ মিনিট। ফলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকুও থাকে না। এ ক্ষেত্রে আশপাশে থাকা লোকেদের সাহায্যে বিশেষ কৌশলে ফুসফুসে চাপ দিয়ে খাবারের অংশ বার করে আনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল ‘হাইমলিখ’। এই কৌশল ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে লক্ষাধিক রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। বৃষ্টি আমাদের অনুষ্ঠানে ‘হাইমলিখ’ কৌশল রপ্ত করে রাখায় তাঁর মাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।’’