পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে জেলা সংখ্যালঘু সেলের কর্মী সম্মেলন। নিজস্ব চিত্র
কিছু মানুষ ভুল বোঝাচ্ছে, সেই ফাঁদে পা দেবেন না— সাগরদিঘির উপনির্বাচন পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার সংখ্যালঘু কর্মী-সমর্থকদের কাছে এমনই আবেদন রাখলেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হন। সেখানে সংখ্যালঘু ভোটার ভাল সংখ্যায় থাকা সত্ত্বেও দলীয় প্রার্থীর পরাজয় তৃণমূলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে জেলা সংখ্যালঘু সেলের কর্মী সম্মেলনে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘সাগরদিঘি উপনির্বাচনের সঙ্গে তুলনা টেনে অনেকে বলছেন, সংখ্যালঘুরা আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই। যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। মনে রাখবেন, এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের জন্য যা করেছেন, আর কেউ কা করেননি।’’ আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভুল বোঝাচ্ছে। আপনারা ভুল বুঝবেন না।’’ কংগ্রেস-সিপিএমের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘তাঁদের কেউ কেন্দ্রে, কেউ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। সে সময় আর পালাবদলের পরবর্তী সময়ের ফারাকটা বুঝবেন।’’
রাজ্যে পালাবদলের পরে রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণমূলক ও উন্নয়ন কেন্দ্রিক যে সমস্ত প্রকল্প নিয়েছে তা নিয়ে একটি বই এ দিন প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মোক্তার আলি বলেন, ‘‘আমরা একটু সম্মান চাই। সম্মান দিয়ে কাছে ডাকলে মুসলমানেরা আপনার পাশে থাকবেন। কেউ কেউ ইমাম ভাতা, কেউ সংখ্যালঘু বৃত্তি নিয়ে সমস্যার কথা বলেছেন। আমাকে জানাবেন, আপনাদের কলকাতাতেও যেতে হবে না। সমস্যার সমাধান করা হবে।’’
মোক্তার জানান, অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছেন। কিন্তু ওই ফাঁদে পা দেবেন না, ভুল বুঝে সরে যাবেন না। এ রাজ্য কেমন, অন্য রাজ্যে ঘুরলে তা বুঝতে পারা যায়। অন্য রাজ্যের লোকজন বলে, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় থাকতে চান। নিজেদের ভুলের জন্য পুরো একটা প্রজন্মকে কষ্টে ফেলে দেবেন না।
দল সূত্রের খবর, সাগরদিঘির পরাজয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অন্যতম কারণ বলে দলীয় ময়না-তদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে। এ দিন সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি মারিয়া ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘‘এক সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করুন। মনে রাখতে হবে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের জন্য কী কাজ করেছেন।’’
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘পালাবদলের পরে রাজ্যে মোট তিনবার আমাদের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাতে আপনাদের অবদানের কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকার করি আমরা। কিন্তু আজ একটা চক্রান্ত হচ্ছে, বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে। তা আপনাদের রুখতে হবে।’’ দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, এই চক্রান্তের মোকাবিলা করা যাবে। সিপিএম ও কংগ্রেসকে বিজেপি সংখ্যালঘু ভোট ভাঙাতে ব্যবহার করছে। তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার দাবি, ‘‘আমরা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু ভোট বিচার করি না। তৃণমূল আতঙ্কে এ সব বলছে।’’
মাইনোরিটি কমিশনের জেলা সফরে সংগঠনের জেলা সংখ্যালঘু শাখার সভাপতি হিসেবে তাঁকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মঞ্চে ক্ষোভ উগরে দেন শেখ রহমামিন। তিনি বলেন, ‘‘মাইনোরিটি কমিশনের জেলা সফরে আমরা ডাক পাইনি। সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য আমাদের কিছু কথা জানানোর ছিল। আসলে কিছু দালাল এ সবের ঠিকা নিয়েছে।’’ সম্মেলনে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।