মঙ্গলবার বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল কর্মীরা। পিছনে ছবি অনুব্রত মণ্ডলের। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
সিবিআইয়ের করা গরু পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জামিন পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার সকালে এই খবর জেলায় পৌঁছতেই এক দিকে, অনুব্রতের বাড়ির সামনে ‘ভিকট্রি সাইন’ দেখিয়ে জয়ের ইঙ্গিত দিলেন তাঁর পরিজন। অন্য দিকে, টিভির পর্দায় চোখ রাখলেন দলের নেতা-কর্মীরা। সমাজ মাধ্যমেও সকাল থেকে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কেষ্ট অনু্গামীরা। তবে, জেলমুক্তি এখনই হচ্ছে না জেনে হতাশাও রয়েছে তাঁদের মনে।
এ দিন সমাজ মাধ্যমে এমন বার্তাও ছড়িয়ে পড়ে যে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই বোলপুরে ফিরবেন কেষ্টদা। বীরভূম জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী সাহারা মণ্ডল লেখেন, “ফিরছেন স্বমহিমায় দাদা”। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ সাউ লিখেছেন, “সামাজিক মাধ্যম জুড়ে শুধু মানুষের হৃদয়ে জমে থাকা আবেগের বিস্ফোরণ দেখছি”। তৃণমূলের কড়িধ্যা অঞ্চল সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় লেখেন, “সত্যমেব জয়তে, অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ। সেই দিন যারা ঢাক বাজিয়ে ছিল, তারাও তৈরি থেকো।”
‘অনুব্রত মণ্ডল ফ্যান ক্লাব’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে লেখা হয়েছে, “আমরা এত দিন বলেছি, বাঘ ফিরবে৷ এখন বলছি বাঘ ফিরছে।” রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের একাংশও সকাল থেকে এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা কথা তুলে ধরতে শুরু করেন। তবে, এ দিন বেলার দিকে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে জদেলার নেতা-কর্মীদের বার্তা দেওয়া হয় যে, এই বিষয়ে কোথাও খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যাবে না। তার প্রভাব দেখা গিয়েছে সমাজ মাধ্যমেও। সকালের উচ্ছ্বাস বেলা বাড়ার সঙ্গে অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।
সেই নির্দেশের ফলেই হয়তো বোলপুর থেকে সিউড়ি দলীয় কার্যালয়— কর্মীরা কোথাও উচ্ছ্বাস দেখাননি। তবে এ দিন খবর শোনার পরে বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের ভিড় কিছুটা বাড়ে। জামিনের খবরে খুশি অনুব্রতের পরিজনও। অনুব্রতের দাদা সুব্রত মণ্ডল বলেন, “এক অগস্টে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর এক অগস্টে তিনি ফিরবেন, বলেই আমাদের আশা। দু’বছর ধরে আমরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম।” যদিও তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এই দুঃসময়ে দল তাঁর পাশে থাকলেও, স্থানীয় কিছু নেতা দাদার খোঁজ নেননি।’’ অনুব্রতের ভাই প্রিয়ব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাদা ফিরে আসুক, এটাই চাই। পরিবারের সবাই আবার এক সঙ্গে হোক।’’ খুশি অনুব্রতের বাড়ির সামনে থাকা চা ব্যবসায়ী হারাধন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এত দিন আমার সামনের নীল রঙের দোতলা বাড়িটা ফাঁকা পড়ে থাকত। এ বার হয়তো সেই শূন্যতা দূর হবে।”
তৃণমূলের উচ্ছ্বাস নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, “অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে একক ও যৌথ মিলিয়ে অনেক মামলা আছে। একটিতে উনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন। এখনও মামলা বাকি আছে, সঙ্গে নতুন মামলা যুক্তও হতে পারে। এই অবস্থায় যারা তাঁর মুক্তির আশায় উচ্ছ্বাস করছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন!”