বাঁকুড়া মেডিক্যালে মুকুল রায়। নিজস্ব চিত্র
ফের তেতে উঠল পাত্রসায়র। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সফর ঘিরে মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা পথ অবরোধে নামলেন।
শনিবার তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙা। গুলিতে জখম হয় এক ছাত্র ও দু’জন বিজেপি কর্মী। সেদিনের ঘটনায় জখম অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সৌমেন বাউরি ও বিজেপি কর্মী তাপস বাউরিকে দেখতে মুকুল প্রথমে বাঁকুড়া মেডিক্যালে যান। তারপরে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তিনি পাত্রসায়রে যান।
মুকুলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ দিন সকাল থেকেই পাত্রসায়রে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। কাঁকরডাঙা মোড়ে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার কর্মীও জড়ো হন। সৌমেনদের উপরে হামলার প্রতিবাদে ধিক্কার জানানো এবং বিজেপির পাত্রসায়র ২ মণ্ডল সভাপতি তমালকান্তু গুঁইয়ের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মহিলারা সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। মুকুল জখমদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে যান।
পথে: কাঁকরডাঙা মোড়ে বিজেপি কর্মীরা। ছবি: তারাশঙ্কর গুপ্ত
বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের কর্মীরা যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পাত্রসায়রের বলরামপুর এলাকায় তৃণমূল কর্মীরা জমায়েত করে তাঁদের গাড়ি আটকে দেন। গোলমালের আগেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল চারটের পর থেকে বেশ কিছুক্ষণ কাঁকরডাঙা মোড়ে, বর্ধমান-সোনামুখী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
অন্যদিকে বিজেপি কর্মীদের গাড়ি আটকানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, “আমাদের কর্মীরা বিজেপির লোকেদের গাড়ি আটকাননি। বিজেপির লোকেরাই এলাকায় গোলমাল পাকাচ্ছে। সেই ক্ষোভে সাধারণ মানুষই বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”
শনিবার শুভেন্দুর ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় কাঁকরডাঙায়। বিজেপির দাবি, শুভেন্দুকে দেখে জয় শ্রীরাম বলে চিৎকার করেছিলেন মানুষজন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। সেই গুলিতেই জখম হয় সৌমেন, তার জেঠতুতো দাদা তাপস বাউরি ও পড়শি টুলুপ্রসাদ খাঁ।
যদিও পুলিশের অভিযোগ, ঘটনার দিন গণ্ডগোল পাকাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বোমা-সহ অস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। শুভেন্দু এলাকা ছাড়তেই পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে জনতার। আটজন পুলিশ কর্মী জখম হন। তবে পুলিশ গুলি চালায়নি বলেই দাবি করেছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও।
এ দিকে জখমদের মধ্যে টুলুপ্রসাদ সুস্থ হয়ে ওঠায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। পেটে গুলি ফুঁড়ে যাওয়া সৌমেন এখনও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি। তাপসও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিন হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমে সৌমেনের সঙ্গে দেখা করেন মুকুল। পরে যান তাপসের কাছে।
তিনি দাবি করেন, “সৌমেনের একটা কিডনি বাদ দিতে হয়েছে। ওর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সঙ্কট এখনও কাটেনি।” পাত্রসায়রে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে এতটাই মরিয়া যে পুলিশ দিয়ে এক জন ছাত্রের উপর গুলি চালানো হচ্ছে। পুলিশ দাবি করছে তারা গুলি চালায়নি। তাহলে কে গুলি চালাল? প্রকৃত সত্য জানতে সিবিআই তদন্ত করানো হোক।”
তমালকান্তি এখন পুলিশ হেফাজতে। বিষ্ণুপুর আদালতে তাঁকে আজ, বুধবার তোলার কথা। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুকুল বলেন, “আমাদের দাবি, যারা গুলি চালিয়েছে তাদের শাস্তি এবং তমালের মুক্তি। দাবি না মানলে প্রশাসন বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকুক।” এ দিনও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “পাত্রসায়রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ দিন কোনও গোলমালের খবর পাইনি। কারা গুলি চালিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”