এ জে সি বসু রোডে ডিরোজিয়োর বসতবাড়িতে তাঁর নামাঙ্কিত ফলক। —নিজস্ব চিত্র।
১৫৫এ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড। ইতিহাস বলছে, এই বাড়িতেই থাকতেন সমাজ সংস্কারক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজ়িয়ো। কাগজেকলমে এই বাড়িকে হেরিটেজ তকমা দিলেও সেখানে আজও ফলক লাগায়নি কলকাতা পুরসভা। বৃহস্পতিবার ডিরোজ়িয়োর ১৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঐতিহ্যশালী সেই বাড়িতে পুরসভার উদ্যোগে ডিরোজ়িয়োর নামের ফলক ও মূর্তি বসানোর দাবি তুলল ‘ডিরোজ়িয়ো স্মরণ সমিতি’। সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা এই বিষয়ে আগেও পুরসভাকে অনুরোধ করেছে।
১৮৩১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২২ বছর বয়সে কলেরায় মারা যান ডিরোজ়িয়ো। এ দিন সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্রে তাঁর সমাধিতে ফুল-মালা দিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন অনুগামীরা। কিছু পরে সেখানে মালা দেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ডিরোজ়িয়ো-গবেষক তথা ডিরোজ়িয়ো স্মরণ সমিতির সদস্য শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, যুক্তিবাদী এই মানুষটি একাধারে হিন্দু কলেজের শিক্ষক, কবি, সাংবাদিক এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তাঁর অনুগামী ছাত্রেরা তৈরি করেছিলেন ‘ইয়ং বেঙ্গল’। ডিরোজ়িয়োর সংস্কারমুক্ত মন আজকের দিনে আরও প্রাসঙ্গিক। অথচ আজ কেউ কি তাঁকে মনে রেখেছেন?
ডিরোজ়িয়ো স্মরণ সমিতির বক্তব্য, ১৫৫এ, এ জে সি বসু রোডের ঠিকানায় ডিরোজ়িয়ো থাকতেন। ওই ঠিকানায় বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে তাঁর কোনও স্মৃতিচিহ্ন নেই। এমনকি, পুরসভা কোনও ফলকও লাগায়নি। বাড়িটিকে হেরিটেজ তকমা দিয়ে দায়িত্ব সেরেছে পুরসভা। সমিতির তরফে শুধু দেওয়ালে একটি ফলক লাগানো হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ বিভাগের এক কর্তার দাবি, ‘‘ওই বাড়িটিকে ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজের তকমা দেওয়া হয়নি। তাই ডিরোজ়িয়োর নামে কোনও ফলক পুরসভা লাগায়নি। বাড়িটিতে এখন বেসরকারি হাসপাতাল চলছে। মানুষ সেখান থেকে পরিষেবা পান।’’
যদিও ডিরোজিয়ো স্মরণ সমিতির অন্য এক সদস্য, চিকিৎসক শঙ্কর নাথ বলেন, ‘‘ওই ঠিকানার পুরনো বাড়িতে এখন হাসপাতাল চলছে, সেটি অনেকটা এলাকা জুড়ে রয়েছে। ভিতরে ফাঁকা জায়গাও আছে। পুরসভার সদিচ্ছা থাকলে হাসপাতালের পরিষেবার অসুবিধা না করেও সেখানে ডিরোজ়িয়োর মূর্তি ও ফলক বসানো যায়। তা হলে আরও বেশি মানুষ ডিরোজ়িয়োর কথা জানতে পারবেন।’’ ডিরোজ়িয়োকে নিয়ে বই লিখেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘আজকের দিনে ডিরোজ়িয়োর মতো সংস্কারমুক্ত মানুষের প্রয়োজন অনেক বেশি। ডিরোজ়িয়ো সম্পর্কে এই প্রজন্মকে জানাতে তাঁর ঠিকানায় অন্তত মূর্তি ও ফলক কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে বসানো উচিত।’’