Primary School

‘মাসের পর মাস স্কুলে না এসে বেতন নেন’! শিক্ষকদের তালাবন্দি করে বিক্ষোভ অভিভাবকদের

স্কুলের সহ-শিক্ষক সুদীপ মহাপাত্র অভিভাবকদের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষক দিনের পর দিন স্কুলে না এলেও হাজিরা খাতায় কী লেখেন, তা তিনিই জানেন।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৮
Share:

স্কুলের গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ অভিভাবকদের। —নিজস্ব চিত্র।

মাসের পর মাস স্কুলে আসেন না প্রধানশিক্ষক। তার পর নাকি ইচ্ছামতো হাজিরা খাতায় সই করে দেন তিনি। এমনই অভিযোগে সহ-শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকাবাসী। বাঁকুড়া-১ ব্লকের কেঞ্জাকুড়া হাই অ্যাটাচড্ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে শিক্ষকদের বন্দি করে রাখেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক স্কুলে না আসায় পঠনপাঠন ঠিক করে হচ্ছে না। মিড ডে মিল দেওয়া হয় না ঠিক করে। স্কুলের অন্যান্য কাজও ঠিক করে হয় না।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, বাঁকুড়া-১ ব্লকের হাই অ্যাটাচড্ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সময় লেখাপড়ার মান ছিল যথেষ্ট ভাল ছিল। পড়ুয়ার সংখ্যার বিচারেও এলাকার অন্যতম বড় স্কুল হিসাবে পরিচিতি এই স্কুল। বর্তমানে স্কুলের পাঁচটি ক্লাস মিলিয়ে ১৮৩ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু প্রধানশিক্ষক বিপ্লব মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই অভিভাবকদের। তাঁদের অভিযোগ, মাসের পর মাস স্কুলে না এসে দিব্যি হাজিরা খাতায় সই করে যান প্রধানশিক্ষক। মাইনে নেন। অথচ, নিজের কাজ ঠিক ভাবে করেন না। স্কুলের অন্যান্য সহ-শিক্ষকের দাবি, প্রধানশিক্ষককে স্কুলে শেষ দেখা গিয়েছিল প্রায় মাস দুই আগে। তারিখটা ছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রধানশিক্ষকের এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে পড়াশোনা লাটে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

শুধু তাই নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মিড ডে মিলের মান নেমেছে। স্কুলের মূল্যায়ন, পরীক্ষা-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে প্রধানশিক্ষকের অনুপস্থিতিতে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন এই কাজ করতে। বিজন চন্দ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষক এমনিতেই নিয়মিত আসতেন না। কোনও সপ্তাহে এক দিন, আবার কখনও দু’সপ্তাহে এক দিন স্কুলে আসতেন। মাস দুই আগে প্রধানশিক্ষক মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ চালে ব্যাপক বেনিয়ম করেছেন। তার পর থেকে তিনি আর স্কুলমুখো হননি। প্রধানশিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকছে মিড ডে মিল। আর কয়েক দিন পর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু প্রধানশিক্ষক না আসায় সেই পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’’

Advertisement

স্কুলের সহ-শিক্ষক সুদীপ মহাপাত্র অভিভাবকদের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষক দিনের পর দিন স্কুলে না এলেও হাজিরা খাতায় কী লেখেন, তা তিনিই জানেন। আমরা নিয়মিত স্কুলে এলেও প্রধানশিক্ষক না আসায় বহু কাজ আটকে যায়। পঠনপাঠনও ব্যাহত হয় তাঁর অনুপস্থিতির কারণে।’’

মঙ্গলবার সহ-শিক্ষক এবং শিক্ষিকারা স্কুলে আসতেই এলাকার মানুষ এবং অভিভাবকেরা স্কুলের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বেশ কিছু পড়ুয়াকেও তালাবন্দি অবস্থায় দীর্ঘ ক্ষণ কাটাতে হয়। পরে খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ এবং শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা ওই স্কুলে যান। তাঁরা অভিভাবকদের বুঝিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করেন। বাঁকুড়া সদর পশ্চিম চক্রের স্কুল পরিদর্শক ইরা সুবুদ্ধি বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের কথা অভিভাবকদের মুখে শুনলাম। সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্কুলগুলিতে নজরদারির কোনও অভাব নেই। এই স্কুলের প্রধানশিক্ষক যে স্কুলে আসছেন না, তা আমরা আগে জানতাম না।’’

অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তিনি সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘অক্টোবর মাসে টানা বেশ কিছু দিন ছুটি নিয়েছিলেন। নভেম্বরে বিএলও হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ায় স্কুলে আসা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মাসের পর মাস স্কুলে না যাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আর মিড ডে মিলে বেনিয়মের অভিযোগও সম্পূর্ণ পরিকল্পিত চক্রান্ত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement