খয়রাশোলের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
অনুব্রত মণ্ডলের মামলা রাজ্য থেকে সরানোর দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার খয়রাশোলের গোষ্ঠডাঙাল মাঠে সভা ছিল শুভেন্দুর। সভা শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি দাবি করছি কেষ্ট মণ্ডলের মামলা রাজ্য থেকে সরানো হোক। কারণ, জেলের ভিতরে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা তিনি পাচ্ছেন।’’
কেবল জেলবন্দি অনুব্রতকেই নয়, এ দিনের জনসভা থেকে জেলা তৃণমূলে নেতাদের তীব্র আক্রমণ করেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। অভিযোগ করেন, গরু ও কয়লা পাচার, নিয়োগ ‘দুর্নীতি’, ‘তোলাবাজি’ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শাসকদলের নেতারা। তাঁর নিশানা থেকে বাদ যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
চলতি মাসের ১৩ তারিখ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। ওই কর্মসূচিকে সফল করতে জেলায় জেলায় গুচ্ছ কর্মসূচি হবে। এ দিন খয়রাশোলের জনসভা দিয়েই তার সুচানা হল। শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সাংগঠিনক জেলার সভাপতি ধ্রব সাহা ,দুবারজপুরের বিধায়ক অনুপ সাহা, দুর্গাপুর দক্ষিণের বিধায়ক লক্ষ্ণণ ঘড়ুই সহ একগুচ্ছ নেতানেত্রী।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামপুরহাটের বগটুইয়ে গণহত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ভাদু-আনারুলের সৃষ্টিকর্তা অনুব্রত মণ্ডল আর তার মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে বীরভূম জেলার যে দুর্গন্ধ চাপা ছিল, তার ঢাকনা উঠে যায়। সিবিআই-ইডি যাতায়াত করতে শুরু করে।’’ তাঁর দাবি, বালি চুরি সবচেয়ে বেশি বীরভূমে। আসানসোল ও পুরুলিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কয়লাও চুরি হয় বীরভূমে, পাথর চুরি সবচেয়ে বেশি বীরভূমে, বেআইনি টোলট্যাক্স বসিয়ে কোটি কোটি টাকা লুট, ১০০ দিনের টাকা মারা থেকে গরু পাচার—সব হয় এই বীরভূমে। শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘এই কাজটা করেছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর সাথীবৃন্দ। কত চোর বীরভূমে আছে? অনুব্রত আটবার সিবিআইকে ল্যাজে খেলিয়েছেন তার পরে সিবিআই তাঁকে ধরেছে।’’
অনুব্রতের পাশাপাশি শুভেন্দু নিশানা করেন জেলার অন্য নেতাদেরও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দাবি করি এই অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে একা ডাকাত সর্দার নয়। ১৬০টি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এখানে শেষ করলে তো হবে না। রানা (লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ) এখনও আছে, বিকাশ (সিউড়ির বিধায়ক তথা জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী) এখনও আছে, পীযূষ পাণ্ডে (দুবরাজপুরের পুরপ্রধান) আছে।’’ বিরোধী দলনেতা নাম করেন আরও একগুচ্ছ স্থানীয় নেতার।
শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘লাভপুরের বিধায়ক অনেক বড় বড় কথা বলেছেন, আগে যে যা টাকা কেষ্টকে দিত এখন রানার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এখন সব রানার নির্দেশে চলছে। তাঁর সব টাকা টাকা নেপাল বাংলাদেশে আছে।’’ জবাবে লাভপুরের বিধায়ক বলেন, ‘‘উনি যে-সব অভিযোগ করছেন, তার একটিও প্রমাণ করতে পারলে আমি বিধায়ক-সহ সব পদ থেকে ইস্তফা দেব।’’ বিকাশ বলেন, ‘‘যা বলার দল বলবে।’’ দুবরাজপুরের পুরপ্রধানকে নিয়ে বলতে গিয়ে শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘কেষ্ট যদি ৫০০০ কোটির মালিক হয়, রানা ৫০০ কোটি। পীযূষও কাছাকাছি যান। ২০০কোটি পার করে দিয়েছে।’’ পীযূষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’