সিংহবাহিনীর পুজো। নিজস্ব চিত্র
এক সময় বাড়িতেই ধুমধাম করে পুজো হত। এখন অর্থাভাবে সেই পুজো সর্বজনীন। আগের জৌলুস অনেকটাই হারিয়েছে নলহাটির ভদ্রপুর সিংহবাহিনীর পুজো। সিংহবাহিনী পরিবারের নামে আজও পুজো হয় ঠিকই। কিন্তু, ভদ্রপুর গ্রামে ওই পরিবারের কোনও বংশধরই নেই আর। সিংহ পরিবারের দিয়ে যাওয়া জমির আয় থেকে পুজোর খরচ না ওঠায় গ্রামবাসীরাই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
পুজো শুরুর সঠিক দিনক্ষণ এখন আর স্মরণ নেই কারও। তবে গ্রামের প্রবীণেরা মনে করেন, ভদ্রপুর সিংহবাহিনীর পুজো ২৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পুজো শুরুর কিছুটা কাহিনি শুনেছেন তাঁরা। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের বাসিন্দা শশধর সিংহ মায়ের আরাধনা শুরু করেন। ভদ্রপুরের অশোক মুখোপাধ্যায়, সপ্তম মণ্ডল বলেন, ‘‘পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি, শশধর সিংহ নামে এক কায়স্থ গ্রামে বাস করতেন। তাঁর এক বন্ধু ছিলেন ষষ্ঠী শাঁখারি। ওই শাঁখারি পুজোর আগে ভদ্রপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামে ঘুরে ঘুরে শাঁখা বিক্রি করতেন।’’ অশোকবাবু জানালেন, কোনও একদিন এক কিশোরী হরিসাগর পুকুর পাড়ে মাটি নিয়ে খেলা করছিল। শাঁখারিকে দেখতে পেয়ে শাঁখা পড়তে চায় কিশোরী। শাঁখা পরার পরে পয়সা চাইলে কিশোরী বলে, ‘শশধর সিংহ আমার বাবা। টাকা তোমাকে দিয়ে দেবে’।
কথিত রয়েছে, ষষ্ঠী শাঁখারি কিশোরীকে শাঁখা পরিয়ে শশধরের কাছে টাকা চাইতে যান। মেয়ে শাঁখা পরেছে শুনে শশধর তো আকাশ থেকে পড়েন। তাঁর তো মেয়েই নেই! তাহলে শাঁখা কে পরল? দুই বন্ধু বাড়ি থেকে বের হতেই হরিসাগর পুকুরের মধ্যে থেকে চার হাত তুলে মা দুর্গা দেখা দেন। সেই রাতেই নাকি শশধর সিংহকে মা স্বপ্নাদেশ দেন, ‘আমি তোমার পুজো নেব। আমি তোমার কন্যারূপে যাব’।
সেই থেকেই ভদ্রপুরে পুজো শুরু—এমনই কাহিনি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। চার হাত তুলে দেখা দিয়েছিলেন বলে আজও ওই রূপের মূর্তি পূজিত হয়। বর্তমান পুজো কমিটির সম্পাদক চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রায় ৬২ বছর আগে সিংহ পরিবারের অবলুপ্তি ঘটেছে। তার পরে গ্রামের মানুষই পুজো পুজোর দায়িত্ব সামেলেছেন। এখন চাঁদা তুলে পুজো টিকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে, দুর্মূল্যের এই বাজারে পুজো চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’’ কিছুটা বাজেট কাটছাঁট করেই সেই পুজো করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।