রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা কনভেনশনের উদ্বোধন করলেন সাংসদ শতাব্দী রায়।সিউড়িতে রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবি নয়, সরকারি কর্মচারীদের বরং রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধে ভোগ করার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত বলে ‘পরামর্শ’ দিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। রবিবার সিউড়িতে তৃণমূলপন্থী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অধিবেশন মঞ্চে শতাব্দীর বার্তা, ‘‘রাজ্য সরকারের কর্মী হিসেবে আমাদের মনে হতে পারে সরকারের আরও অনেক কিছু দেওয়া উচিত, করা উচিত। কিন্তু আমরা যদি ভাবি, সরকার আমাদের জন্য অনেক করছেন, ভবিষ্যতে আরও করবেন, আমাদের সমস্যার সমাধান করবেন— তাহলে সকলের জন্যই অনেক ভাল হবে।”
এ দিন সিউড়ির সিধো-কানহু মঞ্চে আয়োজিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা কনভেশনের উদ্বোধনে এসেছিলেন বীরভূম কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী। সেখানেই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সরকারি কর্মীদের দাবি প্রসঙ্গে মুখ খোলেন তিনি। বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিরোধী মনোভাবাপন্ন সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন। তৃণমূলপন্থী কর্মচারীদের অনুষ্ঠানে এসে ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির সুবিধেগুলিকেই তুলে ধরেন তিনি।
শতাব্দী বলেন, “আমরা যা চাই আর যা পাই, তা কখনওই সমান হতে পারে না। চাওয়া পাওয়ার হিসেব সবসময়ই অসমান থেকেছে, থাকবেও। আমি ভাবতেই পারি, আমি যা কাজ করি তার জন্য আমার অনেক বেশি টাকা, অনেক বেশি সম্মান পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি কম পাচ্ছি। অন্য দিকে যে দিচ্ছে সে ভাবছে, আমরা অনেক বেশি দিচ্ছি, অনেক বেশি করছি।” তাঁর দাবি, ‘‘চারপাশে তাকালেই দেখা যাবে প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে ভোগ করছে।’’ সেই বিষয়টিকে মাথায় রাখার পরামর্শ দেন শতাব্দী। শতাব্দীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে যেভাবে উনাদের নেত্রী নানান ভাঁওতা দেন, সেই একই ভাষায় কথা বলছেন উনিও।”
তৃণমূল আমলে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শতাব্দী বলেন, “সরকারের ভুল ধরাই যায়। কাজ করলেই ভুল হবে। অনেক কাজ করলে ভুলের পরিমাণও বাড়বে। কিন্তু হিসেব করলে দেখা যাবে ভাল কাজের সংখ্যা ভুলের তুলনায় অনেক বেশি।” দুর্নীতির দায় দল নয়, ব্যক্তিকেই নিতে হবে বলেও স্পষ্ট করে দেন শতাব্দী। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আর প্রতিটা অফিসে অফিসে গিয়ে কাজ করেন না। তাই তাঁর অধীনে যারা আছেন, তাঁদেরও সঠিক কাজ করাটা খুব জরুরি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘শুধু রাজনীতিবিদেরা খারাপ কাজ করেন এমনটা নয়। মানুষ সৎ অথবা অসৎ হয়। কোনও মানুষ খারাপ হতে পারেন, কিন্তু তার অর্থ তাঁর দল বা নেত্রীও খারাপ, এমনটা নয়। একটি সুশিক্ষিত পরিবারে একজন খারাপ ছেলে থাকলে গোটা পরিবারকে খারাপ বলা যায় না।”
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকেই সরকারী কর্মীদের সামনে তুলে ধরেছেন সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানুষ আজও ভরসা করে, বিশ্বাস করে, শ্রদ্ধা করে। আপনারও তাঁর সঙ্গে থাকুন, আমাদের সঙ্গে থাকুন।” ধ্রুব পাল্টা বলেন, “উনি যে স্বীকার করেছেন ওঁদের পরিবারে কেউ কেউ চোর, এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে তাঁর জানা উচিত তৃণমূলের সবাই চোর। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মানুষ সেই জবাব দিয়ে দেবে।”