Rampurhat Murder

Rampurhat Clash: পুলিশকে বগটুইতে না ঢোকার ‘হুকুম ফোন’ কার ছিল? আইসি-কে জেরা করল সিবিআই

বগটুই তদন্তে উঠছে নানা প্রশ্ন। ভাদুর খুনের পর দ্রুত এত লোক জড়ো হল কোথা থেকে? কোথায় ছিল অস্ত্র? প্রশ্নগুলি ভাবাচ্ছে সিবিআইকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২২ ১৪:৪৮
Share:

নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সিবিআই। — ফাইল চিত্র

ভাদু শেখ খুনের রাতে বগটুই গ্রামে যখন তাণ্ডব চলছে, তখন পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় তৃণমূলনেতা আনারুল হোসেনকে ফোন করে আর্তিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সে রাতে বগটুই যায়নি বলেই অভিযোগ। সে কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বগটুই গিয়ে বলেছিলেন। ফলে বগটুই-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রথম থেকে। ওই ঘটনার তদন্তভার এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)-র হাতে। পুলিশের ভূমিকাও তাদের আতসকাচের তলায়। একইসঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে আনারুলের ভূমিকা। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২১ মার্চ রাতে ব্লক তৃণমূল নেতা আনারুলই কি পুলিশকে ফোন করে বগটুই যেতে নিষেধ করেছিলেন? না কি জেলা নেতৃত্বের অন্য কোনও নেতা পুলিশকে ওই ‘হুকুম’ দিয়েছিলেন? সে প্রশ্নের জবাব পেতে নানা দিক খতিয়ে দেখছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। এমনটাই জানা যাচ্ছে তদন্তকারীদের সূত্রে।
বগটুই-কাণ্ডের মাকে হারিয়েছেন মফিজা বিবি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আনারুলের নির্দেশেই সব হয়েছে। সে রাতে আমরা ওকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু, তিনি সহযোগিতা করেননি। যার জন্য এতগুলো প্রাণ চলে গেল।’’ মুখ্যমন্ত্রীও বগটুই দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘আনারুলকে ফোন করে পুলিশ পাঠানোর কথা বলেছিলেন গ্রামবাসীরা। কেন পুলিশ পাঠায়নি?’’ তবে কি ভাদু-খুনের রাতে আনারুলই রামপুরহাট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আসতে বারণ করেছিলেন? না কি আনারুল গ্রামবাসীর ফোন পেয়ে জেলার কোনও শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে ফোন করেছিলেন? তিনিই কি পুলিশে ফোন করে ‘হুকুম’ দিয়েছিলেন, গ্রামে যেতে হবে না।

Advertisement

তবে এখনও কয়েকটি জায়গায় ধোঁয়াশা কাটছে না তদন্তকারীদের। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা আপাতত সে সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন। বগটুইয়ের ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আনারুলের মতো এক জন ‘সামান্য’ ব্লক সভাপতির পক্ষে কি পুলিশকে ওই ‘হুকুম’ জারি করা সম্ভব? যদিও গ্রেফতার হওয়ার পর পরই আনারুলকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই আধিকারিকদের একাংশের মত, যেখানে জেলা নেতৃত্বের ইশারা ছাড়া বীরভূমে গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না, সেখানে আনারুলের মতো এক জন মাঝারি স্তরের নেতার পক্ষে পুলিশকে ওই ‘হুকুম’ দেওয়া কি সম্ভব? তাঁদের মতে, জেলার শীর্ষস্তরের কোনও নেতা পুলিশকে ফোন করে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরও কয়েকটি প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। যেমন গত ২১ মার্চ সন্ধ্যায় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর দ্রুত কোথা থেকে এত লোক জড়ো হল? যারা জড়ো হয়েছিল তারা অস্ত্র পেল কোথা থেকে? তাদের হাতে বোমা কোথা থেকে এল?

Advertisement

এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেতে সোমবার সিবিআই আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন বগটুইয়ের বাসিন্দা মিহিলাল শেখকে। রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে মিহিলালের সঙ্গে ধৃত আনারুলকেও বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। মঙ্গলবারও একই ছবি দেখা গিয়েছে। ওই কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকালেই তলব করা হয়েছিল রামপুরহাটের আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিককে। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে বাতাসপুর থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পে আবারও মিহিলালকে নিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। উদ্দেশ্য, দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিদীপ, মিহিলালের সঙ্গে আনারুলকে বসিয়ে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে। তদন্তকারীদের উদ্দেশ্য, বগটুই-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত যা যা অসঙ্গতি তাঁদের চোখে ধরা পড়েছে তার জট কাটানো। তাই অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারীদের একসঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার এই পরিকল্পনা।

ইতিমধ্যেই বগটুই-কাণ্ডের তদন্তকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করে ফেলেছেন তদন্তকারীরা। ওই ঘটনার অভিযুক্তদের কার দাবি কতটা ন্যায্য বা সন্তোষজনক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে (তদন্তের ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফেয়ার টেস্টিং)। এ ছাড়া অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ এবং শ্রেণী বিভাজনের পালাও শুরু হয়েছে (তদন্তের ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া আইডেন্টিফাইং এবং ক্লাসিফাইং হিসাবে পরিচিত।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement