ধৃত আরজু। —নিজস্ব চিত্র।
আদ্রায় তৃণমূলের শহর সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে খুনের নেপথ্যে কি রেলের ঠিকাদারী সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে? ওই ঘটনায় আদ্রায় রেলের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া ঝাড়খণ্ডের এক দাগি দুষ্কৃতী আরজু মালিকের গ্রেফতারের পরে সেই সম্ভবনাই জোরদার হচ্ছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মঙ্গলবার রাতে নিতুড়িয়ার ইনানপুর থেকে জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে গ্রেফতার হয় আরজু। তার কাছ থেকে একটি ৭.৬২ এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বুধবার ধৃতকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরজু মালিক নামের ওই দুষ্কৃতী আদ্রায় রেলের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছিল। সেই ধনঞ্জয় খুনের ‘মাস্টার মাইন্ড’। ভাড়াটে খুনি পাঠানো, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া— পুরো পরিকল্পনাটাই তার।’’ পুলিশ সুপারের দাবি, ওই খুনের আততায়ীদের সম্পর্কে তথ্য মিলেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সে বিষয়ে বিশদে জানাতে চাননি তিনি।
২২ জুন ধনঞ্জয়কে খুনের পরেই বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিজের তত্ত্বাবধানে রাখেন পুলিশ সুপার। ঘটনার পরের দিনই খুনে জড়িত অভিযোগে আদ্রা থেকে দাগি দুষ্কৃতী মহম্মদ জামাল ও কংগ্রেস প্রার্থী আরসাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার চার দিনের মাথায় ঘটনার মূল চক্রীকে গ্রেফতার করে বড়সড় সাফল্য পেল পুলিশ।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, আদতে বিহারের জামুই থানার আরসার গ্রামের বাসিন্দা আরজু মালিক কাজকর্ম পরিচালনা করত ঝাড়খণ্ডের বোকারো থেকে। অতীতে আদ্রায় নানা খুনের ঘটনার তদন্তেও বোকারো থেকেই আদ্রায় রেলের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করার ঘনিষ্ট যোগসূত্র পেয়েছিল পুলিশ। সূত্রের খবর, এ বার আরজু আদ্রায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর সাহায্যে আদ্রা ডিভিশনের রেলের ঠিকাদারির নানা দিক নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগী হয়েছিল।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, রেলের ঠিকাদারি সংক্রান্ত নানা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয়। আদ্রায় আরজুর প্রভাব বিস্তারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তিনি। ফলে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য কয়েকবার হুমকি ফোনও যায় ধনঞ্জয়ের কাছে। কিন্তু তিনি তা গুরুত্ব দেননি। তাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে ছক কষেছিল আরজু। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘খুনের ঘটনার পিছনের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
নিহত নেতার দাদা আনন্দ বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্তে কতটা অগ্রসর হয়েছে, খুনের কারণ কী সম্পর্কে এখনও আমাদের কিছু জানায়নি। ভাইয়ের কাছে হুমকি এসেছিল, কি না জানি না। তার মূলত বেকারির ব্যবসা ছিল। কিন্তু তা-ও করোনার পরে বন্ধ হয়ে যায়।’’
আদ্রায় দীর্ঘদিন খুনোখুনি বন্ধ থাকার পরে ২২ জুন ভরসন্ধ্যায় ভরা বাজারে দলীয় কার্যালয়ে ধনঞ্জয় খুন হওয়ার পরে নড়ে যায় রেলশহর। এলাকায় দাপুটে ও জনপ্রিয় বলে পরিচিত ওই শাসকদলের নেতা খুনের পরের দিন অঘোষিত বন্ধ হয় আদ্রায়। মূল ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে নানা স্থানে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। শনিবার ধনঞ্জয়ের পরিবারকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে সাহায্যের আশ্বাস দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পরের দিন আড়রা গ্রামে নিহত তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে দলীয় ভাবে তাঁর পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক।