সিউড়ির কাপড় এর বাজারে আশামত বেচাকেনা নেই। রবিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজোর মাসখানেক আগেও নিস্তেজ বাজার। রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের সরাসরি প্রভাব পড়ছে পুজোর বাজারে এমনটাই মনে করছেন ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। সিউড়ি, রামপুরহাট, বোলপুর—জেলার তিন বড় শহরেই পুজোর বাজারের ছবিটা কার্যত একই রকম। বিক্রেতারা জানান, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষেও বিক্রি প্রায়ই নেই। তবে আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি বদল হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
বিক্রেতারা জানান, অগস্টের শেষেই পুজোর জন্য নতুন জামাকাপড়ের সম্ভার দোকানে তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। আশা ছিল সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই জমবে পুজোর বাজার। মাসের শুরুতে সে ভাবে বিক্রি না হলেও শনিবার ও রবিবার বাজার চাঙ্গা হবে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। বাজারে ভিড় না হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের প্রায় সকলেই আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিকেই চিহ্নিত করছেন।
বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ সুব্রত ভকত বলেন, “জেলা তথা রাজ্য জুড়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তারই প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজারে। মানুষ এখনও বাজারমুখীই হননি।” তিনি আরও বলেন, “অন্য বছর পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকেই পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়। এই আগাম কেনাকাটা যাঁরা করেন তাঁরা অধিকাংশই চাকুরিজীবী। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে সেই চাকুরীজীবীদের একটা বড় অংশই এখনও পর্যন্ত বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে আছেন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ব্যবসায়ীদের উপর। কাপড়ের দোকানদারদের কার্যত মাথায় হাত পড়েছে।” তিনি জানান, অন্য বছর পুজোর এক মাস আগে যে পরিমাণ বিক্রি হয়, এ বার সেই তুলনায় মেরেকেটে ৩০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। যদিও আরও এক-দুই সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
রামপুরহাটের পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম৷ বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল বান্টিয়া এবং সম্পাদক মহম্মদ সরিফুদ্দিন বলেন, “করোনা পরবর্তী সময়ে পুজোর বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, এ বারের পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় পুজোর মাসখানেক আগে বাজারে কেনাকাটা অন্তত ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এ বার সেই অর্থে এখনও বাজার শুরুই হয়নি। বিক্রি খুব বেশি হলে ২০ শতাংশ বেড়েছে।” বিক্রি কমার কারণ হিসেবে আন্দোলনের পরিস্থিতির উল্লেখের পাশাপাশি নলহাটি, মুরারইয়ে পাথর শিল্পাঞ্চলে ব্যবসার মন্দা, শ্রমিক শ্রেণির হাতে কাজের অভাবকেও দায়ী করছেন তাঁরা।
বিভিন্ন শহরে উচ্ছেদের ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও খারাপ অবস্থা বলে জানাচ্ছেন অনেকে। আইএনটিইউসি পরিচালিত রামপুরহাট শহর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহজাদা হোসেন কিনু বলেন, “আমরা তো দোকান ঠিক ভাবে চালাতেই পারছি না। রেল এবং প্রশাসনের তরফ থেকে নানা ভাবে উচ্ছেদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা বেশি জিনিসপত্র মজুতও করতে পারছি না।”
সিউড়ি শহরেও পুজোর বাজারে বিক্রিবাটা এখনও অত্যন্ত কম। সিউড়ির বড় বাজারগুলিতে সপ্তাহান্তে মানুষের ভিড় তেমন চোখেই পড়েনি। এ ক্ষেত্রেও আন্দোলনকেই কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। সিউড়ির টিকেপাড়া এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী ইন্দ্রনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর বাজার তো এখনও সে ভাবে শুরুই হল না৷ আমরা বাজারের চাহিদা আগাম আন্দাজ করে প্রচুর পরিমাণে পুজোর জামাকাপড় কিনে রেখেছি। কিন্তু আন্দোলনের যে হাওয়া রয়েছে, সেখানে বাজারমুখী হচ্ছেন না কেউই। পুজোর মাসখানেক আগে এই সময়ে অন্য বছর দিনে অন্তত ১২-১৫ হাজার টাকার কেনাবেচা হত। এ বার সেই সংখ্যাটা এখনও পাঁচ হাজার ছোঁয়নি। তবে আরও কয়েক দিন পর হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে।”