বিকাশ রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
‘শারীরিক অসুস্থতার’ কারণে এখনও ছুটিতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর ছুটিতে যাওয়া নিয়ে তখন জেলার রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা হয়েছিল। এ বার দলের সংগঠন মজবুত করার কাজে ফের নিয়ে আসা হল তাঁকে। দীর্ঘদিন ব্লক সভাপতিহীন, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক পদে আবার ফিরিয়ে আনা হল বিকাশবাবুকে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, সপ্তাহ খানেক আগে দলের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘পুরোপুরি না হলেও বিকাশবাবু এখন কিছুটা সুস্থ। তিনি দলের সিনিয়র নেতা এবং জেলা কমিটির সদস্য। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত ওঁকে খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক হিসেবে দল দায়িত্ব দিয়েছে।’’ খয়রাশোল ব্লক তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, দায়িত্ব পাওয়ার পরই বিকাশবাবু এলাকায় গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। পঞ্চায়েত সমিতির হলে সোমবারও একটি সাংগঠনিক বৈঠক হয়েছে বিকাশবাবুর পৌরহিত্যে।
গত বিধানসভা নির্বাচনেও যে ব্লক প্রায় ১৯ হাজার লিড দিয়েছিল, সেই ব্লকেই গত বছর লোকসভা ভোটে দশটির মধ্যে ৯টি পঞ্চায়েতেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়ে শাসকদল। মোট ব্যবধান ১৫৩৬৭টি ভোট। বিকাশবাবুর দায়িত্বে থাকা ব্লকে দলের ভরাডুবি নিয়ে নিয়ে তৃণমূলে প্রশ্ন উঠেছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে বিকাশবাবুকে হুট করে খয়রাশোলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয় সহ-পর্যবেক্ষক পদে অরুণ চক্রবর্তীকে। ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ খুন হওয়ার পর থেকেই খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক ছিলেন বিকাশবাবু। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি।
দলের তরফে জানানো হয়েছিল, বিকাশবাবু জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু, জল্পনা আরও বাড়ল, ঘটনার কিছুদিন পরেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিকাশবাবু দীর্ঘদিনের ছুটিতে চলে যাওয়ায়। এখনও তিনি ছুটিতেই।
তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, বিকাশবাবুকে সরানোর পরেও খয়রাশোলে দলের অবস্থা শোধরানো যায়নি। বরং ক্রমশ সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়েছে পারশুণ্ডি, রূপসপুর, লোকপুর, নাকড়াকোন্দা, পাঁচড়া-সহ প্রায় প্রতিটি এলাকায়। বরং তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথা বাড়িয়ে সেখানে বিজেপি-র অস্তিত্ব বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বুঝে, বিধানসভা ভোটের আগে তড়িঘড়ি ফের অভিজ্ঞ বিকাশবাবুকে ফিরিয়ে আনল দল।
কিন্তু, দলের একটা অংশের প্রশ্ন, যে অসুস্থতার জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদেই পারছেন না, সেই অসুস্থতা নিয়ে বিকাশবাবু কী ভাবে সামলাবেন খয়রাশোল। যেখানে কয়লা করবারের দখল নিয়ে দলের গোষ্ঠীকোন্দল লেগেই থাকে। বিকাশবাবু নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি অসুস্থ হলেও অন্য কোনও দায়িত্ব সামলাচ্ছি না। তা ছাড়া, খয়রাশোল দীর্ঘদিন ধরে সামলেছি। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খয়রাশোলের বুথ স্তরের সাংগনিক শক্তি পুনরুদ্ধারে নজর দিয়েছি। কর্মীদের কাছে ইতিবাচক সাড়া মিলছে। আশা করি ভাল ফল পাব।’’