সতর্ক: আন্তঃরাজ্য নাকা পয়েন্টে গাড়ির ডিকি খুলে চলছে তল্লাশি। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার ধবনি এলাকায় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চে পুরুলিয়া আর বাঁকুড়ার বসন্তের বাতাসে টের পাওয়া যাচ্ছিল ভোটের আগমনি। শুক্রবার বেলায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শোনা গেল, এ দিন বিকেলেই দেশের অন্য চারটি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শুরু হল সেই সাংবাদিক বৈঠক। জানা গেল, প্রথম দু’টি পর্বে, ১ এপ্রিলের মধ্যে মিটে যাবে দু’জেলার ভোটগ্রহণ। তার পরে অপেক্ষা এক মাস। ২ মে সারারাজ্যে ভোটগণনা।
পুরুলিয়া
বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ পুরুলিয়া শহরের বিজ্ঞানকেন্দ্র লাগোয়া জেলা কংগ্রেস অফিসে গিয়ে দেখা গেল, কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। সবার চোখ সামনের টিভি আর হাতের মোবাইলের পর্দায় ঘোরাফেরা করছে। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘প্রথম দফায় ভোট। মনোনয়নের সময়ও হাতে বেশি নেই।’’ ফোনে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।’’
সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দুলমিতে বিজেপির ‘লোকসভা কার্যালয়।’’ গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে ওবিসি মোর্চার জেলা সভাপতি সুভাষ মাহাতোর বাড়ির এক তলার অফিস থেকেই দলের কাজকর্ম চলে আসছে। গিয়ে দেখা গেল, কিছু লোকজন বাইরে রাখা চেয়ার ভিতরে ঢোকাচ্ছেন। জানা গেল, কিছুক্ষণ আগে বৈঠক করে গিয়েছেন জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে হওয়ায় ভালই হয়েছে। সংগঠন মজবুত। গোড়া থেকে ভোটের হাওয়া জোরে বইবে।’’
৩২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আরও সাতশো মিটার মতো গেলেই তৃণমূলের জেলা অফিস। গত জুলাইয়ে উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে ছিলেন দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডু ও মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি। নবেন্দুবাবু বললেন, ‘‘আট দফায় ভোট। এত দিন মানুষকে নির্বাচনী বিধি মেনে চলতে হবে। এটাই যা কিছুটা অসুবিধার।’’
ফিরতি পথে তিন কিলোমিটার গিয়ে শহরের নামোপাড়ায় সিপিএমের জেলা অফিস। দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতো যে গাড়িটিতে চড়তেন, অফিসের ঢোকার মুখেই বাঁ দিকে সেটি রাখা থাকে। সামনে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসেছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিমলেন্দু কোনার। জানালেন, কর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে রয়েছেন। জেলা সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় ফোনে বলেন, ‘‘ব্রিগেড থেকে ফিরেই নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’
বাঁকুড়া
সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাঁকুড়া শহরের রক্ষাকালীতলা এলাকায় কংগ্রেসের অফিসে দেখা গেল, কিছু কর্মী টিভির সামনে বসে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত বাড়ি থেকেই টিভিতে নির্ঘণ্ট দেখেছেন। তিনি বলেন, “প্রস্তুতি আরও জোর কদমে শুরু হবে।” পরের গন্তব্য স্কুলডাঙায় সিপিএমের পার্টি অফিস। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি। টিভি চলছিল। তিনি বলেন, “ভোটের নির্ঘণ্টের থেকেও মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কি না, সেটা জানতে আমরা বেশি আগ্রহী।’’
দেড় কিলোমিটার দূরে সতীঘাটে তৃণমূলের জেলা অফিস ছিল ফাঁকা। শহরের অন্য প্রান্তে বড় রথতলায় বিজেপির জেলা অফিসেও একই ছবি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কোতুলপুরের বিদায়ী বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা বিধানসভা এলাকার গোপীনাথপুরে দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন। কর্মীদের থেকে নির্ঘণ্ট জেনেছেন। ফোনে বলেলেন, ‘‘সারা বছর পড়াশোনা করা ছাত্রের মতো আমরা। সময় কম পেলেও সমস্যা নেই।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দলের ‘পরিবর্তন যাত্রা’ কর্মসূচিতে ছিলেন মেজিয়ায়। তিনি বলেন, “এক কর্মী ফোনে নির্ঘণ্ট জানালেন। আমরা পুরোপুরি তৈরি।”