পৌষমেলা নিয়ে বিতর্কে পুলিশ-প্রশাসন

বেচাকেনা তিন দিন পরেও কেন, বিতর্ক পৌষমেলায়

জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ ছিল, পৌষমেলা হবে তিন দিনের। পরের ৪৮ ঘণ্টা থাকবে মেলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। সেই মতো রবিবার থেকেই দফায় দফায় মেলা কমিটি কেনাবেচা বন্ধ করার জন্য দোকানদারদের কাছে আর্জি জানিয়ে মাইকে ঘোষণাও করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

বিকেল ৩টে ২০। জমজমাট মেলার মাঠ। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ ছিল, পৌষমেলা হবে তিন দিনের। পরের ৪৮ ঘণ্টা থাকবে মেলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। সেই মতো রবিবার থেকেই দফায় দফায় মেলা কমিটি কেনাবেচা বন্ধ করার জন্য দোকানদারদের কাছে আর্জি জানিয়ে মাইকে ঘোষণাও করেছে। কিন্তু তার পরেও সোমবার রাত পর্যন্ত চলল ‘ভাঙা মেলা।’

Advertisement

মেলা বসানো বা তোলার দায়িত্বে থাকা বিশ্বভারতীর কমিটি বলছে, ‘‘আদালতের নিয়ম মেনে, তিন দিনের মেলার শেষ ঘোষণা করেছি।’’ আর জেলা প্রশাসন বলছে, ‘‘আমরা সহায়তা করব। উৎসব ও মেলা আয়োজকেরা উদ্যোগী হোক।’’ প্রশ্ন উঠছে, শেষ-ই যদি হবে, তা হলে মেলার মাঠে বিকিকিনি চলছে কী করে?

সব কিছু দেখে শুনে ক্ষুব্ধ পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, “আদালতের নির্দেশে মেনে, তিন দিনের মেলা আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা সময় ধার্য হয়েছে তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু মেলা ভাঙার পরে, আদালতের অবমাননা করে কেনাবেচা চলছে, তার ছবি ও খবর আছে। বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।”

Advertisement

ঘটনা হল, পৌষমেলার দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন সুভাষবাবু। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরের মধ্যে পৌষমেলার মাঠে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ডাঁই করা হয়েছিল। জমেছিল আরও প্রচুর কঠিন বর্জ্য। সেগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নষ্ট না করে খোলা মাঠেই পোড়ানো হয়। মেলায় দেদার মাইকও বাজে। নিয়ম ভেঙে চলে ডিজেল জেনারেটর। তার পরেই পরিবেশ আদালতের ওই নির্দেশ দেয়।

রবিবার না সোমবার— মেলা কবে শেষ হবে এ নিয়ে যদিও রবিবার রাত পর্যন্ত স্টলে স্টলে নানা কথা শোনা যায়। মাঝে রটে যায়, আদালত একদিন মেলা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই অবশ্য বিনোদন মঞ্চ-সহ প্রদর্শনী মাঠের ৯০ শতাংশ স্টলের শামিয়ানা এবং পাটাতন খোলা হয়ে যায়। তবে মেলার অন্য অংশে জমে ওঠে মেলা। দিনভর সেই ভাঙা দেখতেই মেলাতেই জনতার ঢল নামে। মুর্শিদাবাদ থেকে বাঁশের ঝুড়ি বিক্রি করতে এসেছিলেন সুব্রত মণ্ডল, নাসিমা খাতুনরা। বলেন, ‘‘মেলা ভাঙার পরেই তো আমাদের বিক্রিবাটা হয়। এ বার কোথায় যাব!’’ একই কথা বলছিলেন বাঁকুড়া ও বীরভূমের নানা প্রান্ত থেকে আসা মেলার মাঠে বসা গ্রামীণ শিল্পীরা।

মেলার ভিড়ে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি এমন হয়, যে শান্তিনিকেতনের ডাকঘর মোড়ে বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষকে মাঠে নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হল।

এ দিন শেষ দুপুরে ভুবনডাঙার মাঠে থিক থিক করে ভিড় বাড়তে দেখে, মাঠে ফের হাজির হয় অগ্নি নির্বাপণ এবং জরুরী পরিষেবা কেন্দ্রের একটি দমকলের একটি ইঞ্জিনও। অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে মাঠে ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল দিতে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের কাছে আর্জি জানায় বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের কার্যালয়ের সামনে বসে থাকা একাধিক স্টলে, ফের বিদ্যুতের সংযোগ দিতে দেখা যায় এ দিন সকালে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় থাকা অস্থায়ী পানীয় জলের সংযোগও সমানে চালু রয়েছে। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, “স্টল দিতে যেমন সময় লাগে, ভাঙতেও সময় লাগছে। অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে পানীয় জল ও বিদ্যুৎ চালু রাখার জন্য বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের কাছে আর্জি জানিয়েছি। আদালতের নিয়ম নীতি মেনে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা স্টল খুলছেন।” মেলা কমিটির এক আহ্বায়ক গৌতম সাহা এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সাম্মানিক সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিয়ম মেনে, তিন দিনের মেলার শেষ ঘোষণা করেছি।”

বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বে বোলপুরের আইসিসুবীর কুমার চক্রবর্তী এবং সিআই কল্যাণ মিত্র পুলিশ কর্মী নিয়ে মাঠের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে হাজির ছিলেন এ দিনও। রয়েছেন এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুশোভন মণ্ডলও। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে পুলিশ ও প্রশাসন প্রয়োজনীয়ও সহায়তার জন্য মাঠে রয়েছে। আমরা সহায়তা করব। উৎসব ও মেলা আয়োজকেরা উদ্যোগী হোক।’’ কে সেই উদ্যোগ নেবে, সেটাই এ দিন রাত পর্যন্ত প্রশ্ন থেকে যায়।

বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘প্রদর্শনী মাঠের স্টল তুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোকজন বসেছেন। তবে আদালতের নিয়ম মেনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সবাইকে তুলে দেওয়া হবে। এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রামীণ মেলা। আয়োজন করতে সময় লেগেছে, তুলতেও সময় লাগবে। এবং আদালতের নির্দেশ মেনেই সেটা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement