বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। —ফাইল চিত্র।
মণিপুর নিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বিতর্ক বাড়ালেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। কুকিদের পরোক্ষে ‘অবৈধ বিদেশি’ বলে দিলেন তিনি। আর তা নিয়েই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হল। জিরিবামে নিহত মেইতেই জনগোষ্ঠীর তিনমহিলা এবং তিন শিশুর দেহ, ১১ নভেম্বর জখরাডহরে খুন হওয়া দুই বৃদ্ধ এবং সম্প্রতি পুলিশ অতিথিশালায় হামলার সময় পুলিশের গুলিতে মৃত মেইতেই যুবকের দেহ শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মেইতেইদের যৌথ মঞ্চ জিরিবামের নিংসিংখুল বায়ো ডাইভার্সিটি পার্কে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সম্প্রতি মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপিকে দায়ী করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হস্তক্ষেপ চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতিকেপাল্টা প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা দাবি করেন, মণিপুরে এখন যা চলছে তার কংগ্রেসের আমলের ভুলসিদ্ধান্ত ও ব্যর্থতার ফলশ্রুতি। এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলে দেন, “কংগ্রেস হয়ত ভুলে গিয়েছে তাদেরস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে চুক্তি করে অবৈধ অনুপ্রবেশকে বৈধ করেন এবং নিজের দেশ থেকে গ্রেফতারি এড়াতে পালিয়ে আসা বিদেশি জঙ্গি নেতাদের মণিপুরের মাটিতে স্বাগত জানিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম চালাতে মদত দিয়েছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে না আসায় যে সমালোচনা চলছে, তার জবাবে নড্ডা বলেন, “মণিপুরকে স্বাভাবিক করতে কেন্দ্র ও রাজ্য হাত মিলিয়েদিবারাত্র কাজ করে চলেছে। কংগ্রেসের আমলে বন্ধ, অবরোধ, হিংসা, প্রাণহানি, মুল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল মণিপুর তথা উত্তর-পূর্বে নরেন্দ্র মোদীর আমলে পুরোপুরি শান্তির পরিবেশ পেয়েছিল, ১০টি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাজনিত অতীত ব্যর্থতার জন্যেই মণিপুরে ওই জঙ্গি ও হিংস্র সংগঠনগুলি কষ্টার্জিত শান্তি বানচাল করার শক্তি পাচ্ছে।কংগ্রেসের মতো বিজেপি কোনও ভাবেই এই সব কাজ বরদাস্ত করবে না।”
নড্ডার চিঠির বয়ান সামনে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কুকি সংগঠনগুলির দাবি, নড্ডা কাদের ‘অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাবি করেছেন তা খোলাখুলি বলুন। সংঘর্ষবিরতিতে থাকা কুকি সংগঠনের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “বিজেপি সরাসারি মেইতেইদের পক্ষ নিয়েছে, তাদের সুরে কথা বলছে। তাই জনজাতিদের আর নিজেদের অধিকার ভারত সরকারের কাছে প্রত্যাশা না করাই ভাল।”
বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা এনপিপি আজ দলের ৭ বিধায়ককে নির্দেশ দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের ডাকা আর কোনও বৈঠকে যেন তাঁরা না যান। সংবাদমাধ্যমে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার আগেও দলের অনুমতি নিতে হবে।
এ দিকে, ফেসবুক ব্যবহার করে মণিপুর সংঘর্ষ নিয়ে আপত্তিজনক পোস্ট করায় মণিপুরের কিশোরী পরিবেশকর্মী লিসিপ্রিয়া কাঙ্গুজামের প্রোফাইল ব্লক করা হয়েছে। সংঘর্ষের প্রথম থেকেই লিসিপ্রিয়া কুকিদের দমন করার ডাক দেওয়া, আরাম্বাইটেঙ্গলের প্রশংসা করা, সংঘর্ষে ব্যবহারের জন্য ড্রোন কেনার জন্য অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করার মতো কাজ করছিল। তবে, বেশির ভাগ পোস্ট মেইতেই ভাষায় ছিল। সম্প্রতি তার বেশ কিছু পোস্ট ছিলইংরাজিতে। এর পরেই, তাঁর প্রোফাইল ব্লক করে দেওয়া হল। লিসিপ্রিয়া এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, “আমি কোনও নিয়ম ভাঙিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমায় ভয় পেয়েছেন তাই আমার কণ্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে। গত ৮ বছরে আমার কাজের মাধ্যমে বিশ্ব মঞ্চে মণিপুরকে পৌঁছে দিয়েছি আমি। বিশ্বব্যাপী নেতারা আমার প্রশংসা করছেন। কিন্তু মণিপুর আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এই আমারশেষ পোস্ট।”