—ফাইল চিত্র।
দশ বাই বারো ফুটের একটি ঘর। সে ঘর থেকেই নাকি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তরফে তাঁর দুর্নীতির সাম্রাজ্য চালাতেন সহযোগী রামশঙ্কর মোহান্তি। এমনই অভিযোগ বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তকারীদের। বুধবার ওই ঘরে হানা দিয়ে তা সিল করে দিল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই কাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ে বুধবার পুরসভার ওই ঘরে হানা দেন তদন্তকারীরা। এই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত রামশঙ্করের ব্যবহার করা কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক, পুরসভার একাধিক সিলমোহর-সহ বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। পরে ওই ঘরটি সিল করে দেন তাঁরা।
এই দুর্নীতি-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর একের পর এক ব্যাঙ্কে হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, শ্যামাপ্রসাদের হয়ে বকলমে তাঁর দুর্নীতির সাম্রাজ্য চালাতেন রামশঙ্কর। এবং বিষ্ণুপুর পুরসভায় রামশঙ্করের নামে যে নির্দিষ্ট ঘরটি বরাদ্দ ছিল, তার ভিতর থেকেই পাওয়া যেতে পারে এই দুর্নীতি-কাণ্ডের বহু তথ্যপ্রমাণ। বুধবার তা জোগাড়ে ওই ঘরে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। অভিযোগ, বিষ্ণুপুর পুরসভায় প্রায় ৩০ বছর ধরে একটানা পুরপ্রধান থাকাকালীন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করেছেন শ্যামাপ্রসাদ। পাশাপাশি, পুরসভার বহু প্রকল্পে স্বজনপোষণেরও অভিযোগ উঠেছে এই প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, বিষ্ণুপুর পুরসভার নির্দিষ্ট ওই ঘরে বসেই শ্যামাপ্রসাদের দুর্নীতির সাম্রাজ্য চালাতেন তাঁর সহযোগী রামশঙ্কর।
তদন্তকারীদের দাবি, পুরসভার কাজে ঠিকাদারদের সঙ্গে টাকার লেনদেন থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদের যাবতীয় অনৈতিক কাজকর্ম— সবই হত পুরসভায় রামশঙ্করের জন্য বরাদ্দ দশ বাই বারো ফুটের ওই ঘরের দরজার আড়ালে। সে ঘরেই শ্যামাপ্রসাদের ‘অনৈতিক’ লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে— এ কথা মাথায় রেখে পুরসভার ওই ঘরে যান তদন্তকারীরা। ঘরের একটি আলমারিতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র, তিনটি সিলমোহর এবং কম্পিউটারের একটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, পুরসভার বৈধ সিলমোহরগুলি কী ভাবে রামশঙ্করের ঘরে গেল, তা নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি তাঁর ব্যবহৃত কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক-সহ বিভিন্ন নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “বিষ্ণুপুর পুরসভায় রামশঙ্কর যে কক্ষ ব্যবহার করতেন, তাতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেখান থেকে বেশ কিছু সূত্র আমাদের হাতে উঠে এসেছে। ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন সামগ্রীতে আর কোনও তথ্য লুকিয়ে রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”