প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলায় চলছে পুলিশের মহড়া। নিজস্ব চিত্র
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়ায় কোনও বিক্ষোভকারী মারাত্মক জখম না হন। এই জোড়া লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের শেল বা ‘মার্কার ডাই গ্রেনেড’-এর মতো ‘নন লিথাল ওয়েপন’ (প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র) ব্যবহারে দক্ষ পুলিশকর্মী। জেলার সর্ব স্তরের পুলিশকর্মীকে ওই ধরনের অস্ত্রের কার্যকরী ব্যবহারের কৌশল শেখাতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বাঁকুড়ার থানায়-থানায়।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহারের কৌশল সমস্ত পুলিশ কর্মীদের রপ্ত করাতেই এই উদ্যোগ। প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মীরা থানায় গিয়ে এ নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সহকর্মীদের।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার সঠিক পদ্ধতি, ‘মার্কার ডাই গ্রেনেড’ ছোড়ার কৌশল হাতে ধরে শেখানো হচ্ছে থানার সব স্তরের পুলিশকর্মীকে। সম্প্রতি জেলার প্রতিটি থানায় শুরু হয়েছে এই প্রশিক্ষণ। যেখানে কনস্টেবল থেকে শুরু করে ওসি এবং আইসি-সহ সব পুলিশকর্মীকে এই কৌশল শেখানো হচ্ছে। প্রশিক্ষকেরা মাসে দু’-তিন বার থানায় গিয়ে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
কেন এই উদ্যোগ?
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। তবে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্রের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারলে সেই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।”
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনায় পুলিশকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামতে হয়। তাই সমস্ত স্তরের পুলিশকর্মীই যদি ‘নন লিথাল ওয়েপন’ ব্যবহারের কৌশল শিখে নেন, তবে তাতে প্রশাসনের সুবিধা হবে। জেলা পুলিশ মহলের একাংশের দাবি, এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ পুলিশকর্মীদের দল জেলায় রয়েছে।
লোকসভা ভোট পরবর্তী অশান্ত পরিস্থিতিতে একাধিক ঘটনায় উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। গত ২২ জুন বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে দিন পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের। জখম হন
আট পুলিশকর্মী।
বিজেপি পাল্টা অভিযোগ তোলে, অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র-সহ তিন জন পুলিশের গুলিতে জখম হন। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া গুলিতেই জখম হয়েছিলেন ওই তিন জন।
এক পুলিশ আধিকারিক জানান, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো বা ‘মার্কার ডাই গ্রেনেড’ ব্যবহারের কৌশল জানা না থাকলে হিতে বিপরিত হতে পারে। হাওয়ার অভিমুখ এবং গতিকে কাজে লাগাতে না পারলে কাঁদানে গ্যাসের ‘শেল’ থেকে নির্গত ধোঁয়া উল্টো দিকে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হবে পুলিশকর্মীদেরই। তাই কত দূর থেকে, কোন দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হচ্ছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘মার্কার ডাই গ্রেনেড’ ব্যবহারের মূল লক্ষ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করা। ওই ‘গ্রেনেড’ ফাটার পরে এক ধরনের রং (মার্কার ডাই) বেরোয়, যা লেগে যায় বিক্ষোভকারীদের শরীরে। ওই রং চট করে ওঠে না। প্রশিক্ষণ পর্বে শেখানো হচ্ছে লাঠি চালানো বা ঢাল ব্যবহার করে আত্মরক্ষার কৌশলও।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘লাঠি চালালেই হবে না। এমন ভাবে তা চালাতে হবে যাতে দু’টি উদ্দেশ্য সফল হয়। এক, আঘাত কম হবে। দুই, ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে জনতা।’’