প্রতীকী ছবি।
দশমীর রাত। বোলপুর ডাকবাংলো মাঠের চারপাশে তখন কানফাটানো আওয়াজ! পরের পর ফাটছে চকোলেট বোমা। এক ঝলকে মনে হবে, দুর্গাপুজোর ভাসান নয়, যেন কালীপুজোর উল্লাস। দশমীর পরে একাদশীর পুজো ভাসানের রাতেও প্রশ্ন উঠেছে, এত নিষিদ্ধ শব্দবাজি এল কোথা থেকে?
অনেকেই বলছেন, গত বার যে-ভাবে শব্দবাজিতে রাশ টানতে পেরেছিল প্রশাসন, এ বার তেমন কোনও পদক্ষেপ সাধারণ ভাবে নজরে পড়েনি। তার ফাঁক গলেই বিসর্জনের সময় দেদার নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফেটেছে। গত বছর কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর জেলা জুড়ে পুলিশের লাগাতার অভিযান ও ধরপাকড় চালানোর ফলে দুর্গাপুজো তো বটেই, কালীপুজোতে বাজি ফেটেছিল খুব কম। ছবিটা বদলে গেল বছর ঘুরতেই।
বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, নলহাটি, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ফেটেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। বোলপুরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় প্রকাশ্যেই শব্দবাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট পরিবেশ বান্ধব বাজি অর্থাৎ সবুজ বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু, ভাসানের সময় আওয়াজের যে ঘনঘটা ছিল, তা সবুজ বাজি যে নয়, সে বিষয়ে জেলাবাসী এক প্রকার নিশ্চিত। বহু জায়গায় দশমীর বিকেল থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হতেই নিষিদ্ধ শব্দবাজির ফেটেছে দেদার। এর থেকে স্পষ্ট, লুকিয়ে চুরিয়ে শব্দবাজি প্রচুর বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও, পুরনো বাজি বিপুল পরিমাণে মজুত রাখার নমুনাও মিলেছে পুজোর দিনগুলিতে।
বৃহস্পতিবারও দুবরাজপুরে পাহাড়েশ্বরের শ্মশানকালী বিসর্জনে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফেটেছে। তবে অন্যান্য বার যে হারে সেখানে মুড়িমুরকির মতো শব্দবাজি ফাটে, এ বার প্রশাসন ও স্থানীয়দের মিলিত প্রচেষ্টায় তা অনেকটাই ঠেকানো গিয়েছে। তবে এখনও বিভিন্ন শহরের বড় পুজোগুলির বিসর্জন বাকি রয়েছে। ফলে, শব্দবাজি আরও ফাটবে বলেই আশঙ্কা।
বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “সাধারণত কালীপুজোয় বেশি শব্দবাজি ফাটানো হয়ে থাকে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ অভিযানও চালানো হয় তখন। দুর্গাপুজোতেও বেশ কিছু থানা অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু খোলাখুলি বাজারে কোথাও নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হতে দেখা যায়নি।’’ তবে কালীপুজোয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি পুরোপুরি আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁর আশ্বাস।
পরিবেশপ্রেমী তথা অধ্যাপিকা সুমিত্রা খান বলেন, “শব্দবাজি অতিরিক্ত ফাটার কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই শিশু ও বয়স্কেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।”