দোলযাত্রায় মেতেছে বিষ্ণুপুর। নিজস্ব চিত্র।
এই রাজ্যেই রয়েছে আর এক বৃন্দাবন। দোলযাত্রায় রঙের খেলা এবং নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার মেতে উঠল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর। যার পরিচিতি ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’।
বিষ্ণুপুর এক সময় ছিল মল্ল রাজাদের রাজধানী। প্রায় এক হাজার বছর ধরে মল্ল রাজারা শাসন করেছেন। ষোড়শ শতকের শেষ দিকে মল্লরাজা বীর হাম্বীর বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। তার ফলে গোটা মল্ল রাজত্বে বৈষ্ণব ধর্মের জোয়ার বয়ে যায়। রাজধানী বিষ্ণুপুরের আনাচে কানাচে গড়ে ওঠে অসংখ্য টেরাকোটার মন্দির। কথিত আছে, মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরকে গড়তে চেয়েছিলেন বৃন্দাবনের আদলে। কিন্তু মল্ল রাজাদের প্রবল ইচ্ছা সত্বেও বিষ্ণুপুর পুরোপুরি বৃন্দাবন হয়ে উঠতে পারেনি। তবে এই শহরের ধর্মাচরণ, শিল্প এবং সংস্কৃতিতে যে ভাবে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব পড়েছিল তাতে মানুষের মুখে মুখে বিষ্ণুপুর সেই সময় পরিচিতি পায় ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ হিসাবে। সেই থেকে বিষ্ণুপুরে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রাস এবং দোলযাত্রা।
তবে উৎসবের সেই সব স্মৃতি মলিন হয়ে গিয়েছিল বহু কাল আগে। সম্প্রতি বিষ্ণুপুরে আবার পালিত হচ্ছে দোলযাত্রা। মঙ্গলবার এই উৎসবকে ঘিরে ফের মেতে উঠতে দেখা গেল বিষ্ণুপুরবাসীকে। সকালে প্রভাত ফেরি করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল পৌঁছয় পোড়ামাটির হাটে। সেখানে চলে রং খেলা। অনুষ্ঠিত হয় নাচ, গানও। সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি বিধায়ক, পুরপ্রধান এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরাও দোলখেলায় মেতে ওঠেন। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘আজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষার বেড়া ভেঙে ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এই শহর মেতে উঠেছে রঙের খেলায়। এই শহর যে প্রাণের শহর তা আজ আবার প্রমাণ করে দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের মানুষ।’’
বাঁকুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির হাটে আজ প্রকৃতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি মিলেমিশে রঙিন হয়ে উঠেছে। বিষ্ণুপুরের মানুষের কাছে এটা বড় পাওনা।’’