প্রতীকী ছবি।
সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়া হোক যোগ্য প্রাপকদেরই— সম্প্রতি জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে এমনই জানিয়েছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতার এমন বার্তার পরপরই ‘প্রকৃত প্রাপকদের বাড়ি পেতে দেব না’ বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের এক নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘাটগোপালপুর, রামপুর ও কুড়ালজুড়ির কয়েক জন প্রাপকের অভিযোগ, আবাস যোজনার তালিকায় তাঁদের নাম থাকলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় নথি জমা দিতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন তাঁরা। হুমকি দেওয়া হচ্ছে ‘বাড়ি পাবে না’ বলেও। বিডিও-র পাশাপাশি এ নিয়ে জেলাশাসকের দফতরেও লিখিত অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন তাঁরা। অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা বাংলা আবাস যোজনায় ৮৩ হাজার ৩৫৬টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। ২০১১-১২ সালের আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষা অনুযায়ী যে সব পরিবারের পাকা বাড়ি নেই সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে চলতি অর্থবর্ষে প্রতিটি ব্লক ও সেগুলির অন্তর্গত প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত কতগুলি বাড়ি পেয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতভিত্তিক বাড়ি প্রাপকদের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে যাঁরা অন্য প্রকল্পে বাড়ি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন বা পাকা বাড়ি রয়েছে. এমন উপভোক্তাদের নাম বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবে পঞ্চায়েত। তা পরে ব্লকে পাঠানো হবে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীনারায়ণ গ্রাম পঞ্চায়েতে বাড়ি এসেছে ৪৫৬টি। ‘ওয়েটিং লিস্টে’ নাম রয়েছে আরও ৬২ জনের।
কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রাথমিক কাজকর্ম চলাকালীনই এমন অভিযোগ উঠল।
ঘাটগোপালপুরের বাসিন্দা এলাক খান, সামসুদ্দিন খান, সাহাউদ্দিন খান এবং কুড়ালজুড়ি গ্রামের ইজ মহম্মদ খানদের অভিযোগ, তাঁদের কারও পাকা বাড়ি নেই, আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে। কিন্তু নথিপত্র যাচাই করে জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের কাজল খান হুমকি দিচ্ছেন কোনও ভাবেই তাঁদের বাড়ি পেতে দেওয়া হবে না।
ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য কাজল খানের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা আদৌ প্রাপক কিনা তা দেখার কাজ চলছে। অনর্থক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাদের জেলা সভাপতি যখন চাইছেন যোগ্য প্রাপকেরা বাড়ি পাক, তাতে কেন বাগড়া দেব!’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিনয় বাগদিও বলেন, ‘‘ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা ৬২ জনের মধ্যে ১৬ জনের নথি যাচাই-পর্ব শেষ হয়নি। সেই সময়টুকু তো চাই। হতে পারে সে জন্যেই এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’
কিন্তু প্রধান বা নির্বাচিত সদস্য যা-ই দাবি করুন, সরকারি অবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া নিয়ে এলাকায় অশান্তি হচ্ছে বলে এলাকায় কানাঘুষো শোনা গিয়েছে। এমন ইঙ্গিত মিলেছে দুবরাজপুরের বিডিও অনিরুদ্ধ রায়ের কথাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক জন বাড়ি প্রাপক আমার কাছে নালিশ জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, প্রধান ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ডেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবাস যোজনার প্রাপক হতে গেলে কী কী চাই।’’ তিনি জানান, সে সব যাচাই করে, প্রধানের স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত নামের তালিকা ব্লকে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। কোনও কারণে প্রধান সেখানে স্বাক্ষর না করলে সরকারি আধিকারিক তা করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেলাশাসক দফতর ও রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ— ওই যোজনায় প্রকৃত প্রাপকদের কারও বাদ দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশের অন্যথা হবে না।’’
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘কেউ বাধা দিলে প্রশাসন দেখবে। দলের তরফেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতিকে বিষয়টিকে দেখতে বলছি।’’