বিশ্বভারতীর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে অখুশি বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধিনিষেধের বেড়াজাল দেখে অখুশি বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। যোগেনের মতে, বিশ্বভারতীতে আগেকার মতো খোলামেলা পরিবেশ আর নেই। তাঁর মন্তব্য, নিজের হাতে গড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় তথা শান্তিনিকেতনের এ রকম পরিবেশ দেখে হয়তো অবাক হয়ে যেতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বিশ্বভারতীর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন যোগেন। বিশ্বভারতীর পরিবেশ, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করা বা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় শান্তিনিকেতনের নাম তোলা— একাধিক বিষয়েই মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নিজের খোলামেলা মতামত জানিয়েছেন তিনি। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম না করেই তাঁকে বিঁধেছেন যোগেন। যে ভাবনা থেকে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী গড়ে তুলেছেন, সেই মুক্তাঙ্গনের পরিবেশ যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর নেই, তা-ও মনে করেন তিনি। যোগেনের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতীতে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা খুব ভালর দিকে গিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা কলাভবনে থাকাকালীন খোলামেলা পরিবেশে থাকতাম। আর্ট নিয়ে সব সময়ই শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে আলোচনা হত। অর্থাৎ সে সময় আমরা সামগ্রিক ভাবে কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত থাকতাম।’’ তাঁর মতে, ‘‘আর্টকে (শিল্পকলাকে) যদি বিধিনিধেষের বেড়ায় বেঁধে ফেলা হয়, তবে তা প্রস্ফুটিত হবে না। আজকালকার পরিবেশের যে কথা শুনি... রবীন্দ্রনাথ এ রকম অবস্থা দেখলে নিজেই অবাক হয়ে যেতেন। ভাবতেন, ‘আমার শান্তিনিকেতনে এত রেস্ট্রিকশন (বিধিনিষেধ) কিসের!’। ’’
১৯৮৭ সালে শান্তিনিকেতনে চিত্রকলা বিষয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন যোগেন। অবসরের পরেও বিশ্বভারতী থেকে ছুটি হয়নি তাঁর। দীর্ঘকাল ধরেই কলাভবনের সঙ্গে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত রয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালে বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে মামলা-মোকদ্দমার করা হয়েছে বা তাঁদের ‘ভয়ের’ পরিবেশে থাকতে হচ্ছে, তা নিয়েও সরব যোগেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর নীতি অনুসরণ করলে তাতে কাজের কাজ হবে না। শান্তিনিকেতনে অধ্যাপকদের উপর কেস, একাধিক কোর্টের মামলা, এগুলি খুব দুঃখজনক। রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা অদ্ভুত বলে মনে হয়। বর্তমান ভিসি (উপাচার্য) যদি এ রকম করে থাকেন, তা উচিত নয়।’’
সোমবারই বিশ্বভারতীতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দল এসেছে। শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় তোলা হবে কি না, সে জন্য পরিদর্শন শুরু করেছেন তারা। ঘটনাচক্রে, ঠিক এ সময়ই বিশ্বভারতীর যোগেনের মন্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শান্তিনিকেতনবাসী। যোগেন বলেন, ‘‘দীর্ঘকাল আগে এক বার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় বিশ্বভারতীর নাম তোলার জন্য প্রতিনিধিদল এসেছিল। আমরা সে সময় খুবই আশা করেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। এ বার যদি ওই তালিকায় নাম ওঠে, তবে তা খুশির খবর হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচিল দেওয়া থেকে শুরু করে, অধ্যাপকদের সাসপেন্ড বা পড়ুয়াদের বিক্ষোভ— সব প্রসঙ্গেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তীব্র নিন্দা করেছেন যোগন। তাঁদের আমলে বিশ্বভারতী আক্ষরিক অর্থেই খোলামেলা ছিল বলেও মনে করেন তিনি। বর্ষীয়ান চিত্রকর বলেন, ‘‘আমি ১৯৬৩ সালে প্রথম শান্তিনিকেতন দেখি, তখন এত প্রাচীর দেওয়া ছিল না।’’ যোগেনের মন্তব্য, ‘‘আমাদের সময়ে ছাত্র, অধ্যাপক ও উপাচার্য, সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকত। উপাচার্যকে আমরা দাদা বলতাম।(বিশ্বভারতীতে) এখন সেই পরিবেশ আর নেই!’’