—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েতের জন্য বরাদ্দ টাকা পেতে সমস্যা নেই। কিন্ত কাজে বাধা দেওয়া চেষ্টা আছে বলে দাবি বিরোধী সদস্যদের। সে কারণেই পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়নমূলক কাজ পেতে বিরোধী শাসিত পঞ্চায়েতগুলিকে অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয় বলে দাবি। সেই সঙ্গে রয়েছে ‘প্রভাব খাটিয়ে’ পঞ্চায়েত দখলের চেষ্টাও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক বছর পর এমনটাই অভিজ্ঞতা জেলার বিরোধী গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রধান, সদস্যদের।
বীরভূমে যে ক’টি বিরোধী গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে মহম্মদবাজারের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত— রামপুর, কাপিষ্ঠা এবং আঙ্গারগড়িয়া। তিনটিতেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। গত প্রায় এক বছর ধরে পঞ্চায়েত চালানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে উপরোক্ত বিষয়গুলোই ঘুরিয়ে ফিরেয়ে তুলে ধরেছেন তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও স্থানীয় বিজেপি নেতারা।
রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩-৩ আসনে টাই হয়। বোর্ড গঠন এক বছর ঝুলে থাকার পর টসে জিতে শাসক দল তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে এই পঞ্চায়েতের মোট ৮টি আসনের ৭টি পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি। তাদের দাবি, সে কারণে চেষ্টা করেও শাসক দলের পক্ষে পঞ্চায়েতের দখল সহজ নয়। তবে নানা অভিযোগ তুলে কাজে বাধার চেষ্টা আছে বলে দাবি বিজেপির।
রামপুরের প্রধান মিঠুরানি লোহার বলছেন, ‘‘এই মূহূর্তে পঞ্চায়েতের তহবিল বলতে পঞ্চদশ অর্থ কমিশের টাকা। সেটা ঠিক মতো পাচ্ছি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়নমূলক কাজ আসে না।’’ প্রায় একই দাবি করেছেন ওই ব্লকের বিজেপি পরিচালিক পঞ্চায়েত কাপিষ্টার প্রধান মণিমালা দাস। ১০ আসন বিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েতের ৬টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তৃণমূল পেয়েছে ৪টি আসন।
ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের সাংগঠনিক দিক থেকে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বিজেপির মহম্মদবাজার বি মণ্ডলের সভাপতি পিনাকী মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের দিক থেকে সাহায্য বা সহযোগিতা পেতে অসুবিধে নেই। তবে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ যেহেতু তৃণমূলের দখলে, তাই উন্নয়ন মূলক কাজ পেতে বাধা আছে। যেমন বাড়ি বাড়ি পানীয় জল প্রকল্পের কাজ রামপুরে এখনও শুরু হয়নি।’’ দল ভাঙানোর প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘রামপুরে আমরা শক্তিশালী । তুলনায় কম আসন পেলেও সংগঠন যথেষ্ট মজবুত কাপিষ্ঠায়। ফলে সেই সম্ভাবনা নেই।’’
তবে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহম্মদবাজারে ওই এলাকায় তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা ব্লক সভাপতি কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘কোনও কাজে বাধা দেওয়া হয় না। তবে নির্ধারিত শিডিউল মেনে কাজ না করলে তার প্রতিবাদ হবেই।’’ রামপুর জলপ্রকল্প নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রামপুরে বাড়ি বাড়ি জলপ্রকল্পের কাজ চলতি মাসেই শুরু হবে। রামপুরের মানুষ সেভাবে কাজ পাচ্ছেন না বলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের থেকে অনেক বেশি ভোট লোকসভায় আমরা পেয়েছি।’’
ওই ব্লকেরই আঙ্গারগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ১২ আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েতের ৬টি পেয়েছে বিজেপি, ৫টি তৃণমূল এবং ১টি সিপিএম। নির্ধারিত টাকা পেতে সমস্যা হয়নি বা কাজেও বাধা পড়েনি বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান সুকুমার হাঁসদা। ওই পঞ্চায়েতের ১টি আসন এদিক ওদিক হলেই পালাবদল ঘটতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা নেই বলে দাবি বিজেপির জেলা ওবিসি মোর্চার সভাপতি সন্তোষ ভান্ডারির। তিনি বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের থেকে গত লোকসভায় আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতে এলাকায় ফল ভাল হয়েছে বিজেপির।সাংগঠনিক শক্তির জোরে সেটা সম্ভব হয়েছে।’’
আবার সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত থাকলেও সাঁইথিয়া ব্লকের বিজেপি পরিচালিত একমাত্র পঞ্চায়েত দেরিয়াপুরে কাজে বাধা দেওয়া ও বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ রয়েছে। মোট ৮ আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েতে ৫টি আসন পেয়েছে ক্ষমতায় বিজেপি। প্রধান বুলি পাহারিয়া বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের জন্য নির্দিষ্ট টাকা পেতে সমস্যা নেই। কিন্তু কারণে অকারণে কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা আছে শাসক দলের পক্ষ থেকে।’’
সেই বাধার উদারহণও দেন ওই পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্য। তিনি বলছেন, ‘‘রাস্তা দখল করে এক ব্যক্তি বাড়ি তুলছিলেন বলে মাপামাপি না হওয়া পর্যন্ত পঞ্চায়েত কাজ বন্ধ করিয়েছিল। মাপামাপিতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু শাসক দলের পক্ষ থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েতে।’’ তাঁর আরও দাবি, পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তার কাজও পায়নি গ্রাম পঞ্চায়েত। অভিযোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সুরজিৎ মণ্ডল।
তবে অভিগোগ মানেননি সাঁইথিয়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে পঞ্চায়েতে তালা লাগানো হয়েছিল।’’ পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ থেকে দেরিয়াপুরে একাধিক উন্নয়নের কাজ হয়েছে বলে দাবি সাবেরের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তা হয়েছে। মানুষের রায়ে পঞ্চায়েতে যে দল ক্ষমতায় আসুক তাকে সম্মান জানাতে হবে। তবে আকস্মিকভাবে ক্ষমতায় এসে সঠিক ভাবে পঞ্চায়েত চালাতে না পেরে নানা অজুহাত তোলা হচ্ছে।’’
বিরোধী পঞ্চায়েতে ‘অসহযোগিতা’ শুধু নয়, দল ভাঙিয়ে বিরোধীদের হাতে থাকা পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে আনতে ভোটের এক বছর পরেও তৃণমূল চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা কার্যত ছিনিয়ে নিয়েছে শাসক দল। খয়রাশোলের লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির হাতে থাকলেও সেখানেই পালাবদলের চেষ্টা চলছে বলে দল সূত্রে দাবি। (চলবে)