জেলা প্রশাসনের ‘বিদ্যাসাগর পোর্টাল’
Vidyasagar Portal

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের পাশে

শনিবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর নামে চালু হচ্ছে একটি ‘পোর্টাল’। সেখানে ‘অনলাইন ক্লাস’ করে ছাত্রী-ছাত্রেরা ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০২
Share:

বিদ্যাসাগর। ফাইল ছবি

জেলার পড়ুয়াদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে পাশে দাঁড়াচ্ছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। সেখানে বিশেষ গুরুত্ব পাবে ‘কন্যাশ্রী’রা। আজ, শনিবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর নামে চালু হচ্ছে একটি ‘পোর্টাল’। সেখানে ‘অনলাইন ক্লাস’ করে ছাত্রী-ছাত্রেরা ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। এই উদ্যোগে প্রশাসন পাশে পেয়েছে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলার বিভিন্ন স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষককে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, পড়ুয়াদের কাছে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি ব্লকের কন্যাশ্রী ভবনগুলিকে ‘ফ্রি ওয়াই-ফাই জ়োন’ করা হচ্ছে।

Advertisement

লকডাউন পর্বে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ফাঁকা ক্লাসঘরে শিক্ষকদের পড়ানোর ভিডিয়ো তৈরি হয়েছে। পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধান করেছেন মিশনের প্রধান শিক্ষক স্বামী অজেয়চৈতন্য। বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ বলেন, ‘‘নিজেদের ছাত্রেরা তো বটেই, এলাকার পড়ুয়াদের কল্যাণের লক্ষ্যেও আমরা কাজ করি। প্রস্তাবটা পেয়ে প্রশাসনের মানবিক মুখ আমাদের সামনে ফুটে উঠেছিল। যাবতীয় দরকারে পাশে আছি।’’

পোর্টালে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক ও জীববিদ্যার মোট ১৮২টি ক্লাস থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। প্রতিটি কম-বেশি এক ঘণ্টার। ইতিমধ্যেই ৬৩টি ক্লাস পোর্টালে তোলা হয়েছে। প্রযুক্তিগত দিকটি জেলা প্রশাসনের কর্মী ও আধিকারিকেরা দেখছেন। পড়াশোনার বিষয়ে সমন্বয় করছেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহা। তিনি বলেন, ‘‘প্রবেশিকা পরীক্ষায় কী রকমের প্রশ্ন আসে, কী ভাবে তৈরি হতে হয়, সব ধরে ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। একেবারে কোচিং ক্লাসের ধাঁচেই। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে দুঃস্থ, মেধাবী পড়ুয়ারা অনেক সময় এ ধরনের সুযোগ পায় না। এ বার এই পোর্টালের দৌলতে তাদেরও সাহায্য হবে।’’

Advertisement

জেলাশাসক বলেন, ‘‘২০১১ সালের জনগণনায় পুরুলিয়ায় নারীশিক্ষার হার ছিল ৫০ শতাংশ। এখন সেটা অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু জেলায় গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞান পড়ার চলটা বেশ কম। মেধা এবং ইচ্ছে থাকলেও, শুধু সুযোগের অভাবে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক ছাত্রী কলা বিভাগে ভর্তি হন। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাই জেলা প্রশাসন মেয়েদের বিজ্ঞানশিক্ষার ঝোঁক গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ করছে। তবে সব পড়ুয়াই এই পোর্টালে স্বাগত।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পোর্টালে নিজের নাম, স্কুলের নাম-সহ কিছু তথ্য দিলে মোবাইল ফোনে ‘ওটিপি’ (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসবে। তা দিয়ে ‘লগ-ইন’ করে ক্লাস করতে পারবে পড়ুয়ারা। কন্যাশ্রী ভবনে গেলে নিখরচায় ‘ওয়াই-ফাই’ মিলবে। আর জরুরি ক্লাস ডাউনলোড করে রেখে দেওয়া যাবে মোবাইলে। পরে বাড়িতে ইন্টারনেট ছাড়াও দেখা যাবে। আজ, শনিবার পুরুলিয়ার সমস্ত কন্যাশ্রী ভবনে স্থানীয় স্কুলগুলির একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কৃতী ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হচ্ছে। সেখানে বিষয়গুলি বুঝিয়ে বলা হবে। উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠানটি হবে জেলা প্রশাসনিক ভবনে।

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কর্মী অনুপম চক্রবর্তীর মেয়ে শহরের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘এখানে জয়েন্টের ভাল কোচিং নেই। বাইরে যেতে হয়। পোর্টাল থেকে সবাই উপকৃত হবে।’’

কাশীপুরের সায়নদীপ মণ্ডল এ বছর মাধ্যমিকে পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। মানবাজার গার্লস হাইস্কুলে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে চন্দ্রিমা নন্দী। দু’জনেই নিজেদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। দু’জনেই চায় ডাক্তার হতে।

সায়নদীপ ও চন্দ্রিমা বলে, ‘‘জয়েন্টের কোচিং নিতে কেউ যায় দুর্গাপুর, কেউ বাঁকুড়া, কেউ ঝাড়খণ্ডের বোকারো। সেখানে অনেক টাকা ফি। যাতায়াতের জন্য আরও খরচ রয়েছে। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। পোর্টালে ক্লাস করতে পারলে, আমাদের স্বপ্নও সত্যি হতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement