আশ্বাস: লাদাখ সীমান্তে নিহত জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের বোনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বোলপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে আসতে হলে নিজের নামে জমির পরচা থাকা আবশ্যিক রইল না। তিনি কৃষক। চাষের কাজেই যুক্ত। শুধুমাত্র এই স্ব-ঘোষণাপত্র দিলেই কেউ ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেন। ক্যাবিনেটে পাশ হওয়া এই নির্দেশ সম্প্রতি কৃষি দফতরের কাছে পৌঁছেছে। সেই কথাই সোমবার বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে ফের মনে করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রতিবন্ধকরা সরে যাওয়ায় খুশি জেলার চাষিরা। তাঁদের অনেকেই এতদিন জমি জটে প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেননি। খুশি কৃষি কর্তারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘কৃষক হওয়া সত্ত্বেও এ বার আর কাউকে ফেরাতে হবে না।’’
২০১৯ সালের শুরুতেই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বছর ১ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পটি চালু হয়। সরকার ঘোষিত ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে রবি ও খরিফ মরসুমে দু’দফায় একর প্রতি পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। যদিও অতিরিক্ত জমি থাকলেও অনুদানের অঙ্ক বাড়বে না। অন্যদিকে এক একরের কম জমির জন্য আনুপাতিক হারে অনুদান নির্ধারিত হবে। ন্যূনতম অনুদানের পরিমাণ হবে এক হাজার টাকা। ১৮-৬০ বছর বয়সী কোনও কৃষকের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে সরকার এককালীন দু’লক্ষ টাকাও অনুদান হিসেবে সরকার দেবে বলে জানানো হয়।
কিন্তু রাজ্য তথা জেলার একটা বড় অংশেক কৃষকের (যাঁদের অধিকাংশই প্রান্তিক) সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জমি সংক্রান্ত নথি। যেমন দলিল, রেকর্ড অফ রাইটস, মিউটেশনের কাগজ, বর্গাদার ও পাট্টা পাওয়ার প্রমাণপত্র। চাষি হওয়া সত্ত্বেও সেই নথি অনেকেই দেখাতে পারতেন না। বিশেষ করে উত্তরাধিকার সূত্রে বা দখলকৃত জমি থাকা সত্ত্বেও রেকর্ড না থাকায় বঞ্চিত হতে হত প্রকল্পের সুবিধা থেকে।
বীরভূমের ছবিটাও আলাদা ছিল না। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের সুমারি অনুযায়ী, বীরভূম জেলায় ৩ লক্ষ ১১হাজার ৫৬১টি কৃষক পরিবার রয়েছে। কিন্তু ১০ বছরে পরিবার ভেঙে, জমি বিভক্ত হয়ে সেই সংখ্যাটি বেড়ে কমপক্ষে সাড়ে চার লক্ষ পরিবার হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩৭ হাজার কৃষক প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। দুয়ারে সরকার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১১ হাজার ৪৩৩টি আবেদন জমা পড়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই সরলীকরণের পর সেই সংখ্যাটা লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যাবে।
ঠিক একই রকম আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্য সরকারের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তিনি এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘রাজ্যের ৭২ লক্ষ কৃষকের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৫২ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। ক্যাবিনেটে আপনার এই সিদ্ধান্তের পর আরও ২০ লক্ষ কৃষকও কৃষক বন্ধুর আওতায় চলে আসবেন।’’
তবে চাষি না হয়েও যদি কেউ প্রকল্পের আওতায় চলেও আসেন তাঁকে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে এবং প্রকল্প বাবদ পাওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে বলে ঘোষণা পত্রে উল্লেখ থাকছে।